‘এভাবে পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম না কেন’

কী দোষ ছিল আমার? নিয়ম অনুযায়ী সঠিক লেন দিয়েই মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বাসটি আমাকে চাপা দিয়ে চলে গেল। এখন পা নেই। কীভাবে সংসার চালাবো? সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবো? বাকি জীবনই বা কার মুখের দিকে তাকিয়ে কাটাবো? এভাবে পঙ্গু হয়ে থাকার চেয়ে মরে গেলাম না কেন! বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো সালাউদ্দিন ফকির। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

সালাউদ্দিনের ছোট ভাই ফারুক ফকির  বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্দা এলাকার মৃত হাকিম ফকিরের ছেলে সালাউদ্দিন। রাজধানীর ধানমন্ডি মধুবাজার এলাকায় ডিশ লাইনের চাকরি করতেন। স্ত্রী নীলা বেগম, দুই সন্তান রিয়ান (৮) ও দেড় বছরের সামিয়াকে নিয়ে ওই এলাকারই একটি বাসায় ভাড়া থাকেন সালাউদ্দিন।

 গত ১৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যাওয়ার সময় ধামরাই থানার কালামপুর এলাকায় বেপরোয়া গতিতে আসা রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার ডান পা। পরে তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফারুক ফকির বলেন, চাকরির সামান্য বেতন দিয়ে সংসার চলত সালাউদ্দিনের। পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর এখন সারাদিন কান্না করে আর সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তা করে সময় কাটে তার। কিছুতেই তিনি পা হারানোর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে সালাউদ্দিনের চিকিৎসা খরচ চলছে।

চালকের প্রতিযোগিতার বলি হলেও ওই পরিবহনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা করা হয়নি জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সালাউদ্দিনের দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।

 এ বিষয়ে ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ঘটনার পরের দিন থানায় একটি মামলা (নম্বর ২০) দায়ের করা হয়। পরে বাসটি শনাক্ত করে আটক করা হয়েছে। তবে এর চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ওসি আরো বলেন, বাস কর্তৃপক্ষ মীমাংসার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ভিকটিমের পরিবার যদি যোগাযোগ করে তাহলে আমরা সেটিও চেষ্টা করবো।

Share this post

scroll to top