জাবিতে টানা অবরোধ চলছে, ভিসির পতন পর্যন্ত চালানোর প্রত্যয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে টানা অবরোধ কর্মসূচি এবং ধর্মঘট পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। প্রতিদিনের ন্যায় আজ সোমবার সকাল থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয়। ফলে অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এছাড়াও ঘোষিত সর্বাত্মক ধর্মঘটের আওতায় সমাজ বিজ্ঞান ও কলা অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান করে অবরোধকারীরা ছাত্র-শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা না নিতে অনুরোধ করে। ফলে অনেক বিভাগ নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারেনি। একযোগে প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কাজে বাধা দেয়ায় অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে জাবি ক্যাম্পাসে।

এদিকে ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন ভিসিপন্থী কিছু শিক্ষক। সকালে ভিসিপন্থী শিক্ষকরা বিভিন্ন বিভাগে ঢুকতে চাইলে ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীরা পরস্পর বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পূর্বঘোষিত কোনো পরীক্ষা না থাকলেও শহীদ মিনারের পাদদেশে তাৎক্ষণিক একটি অনুশীলনী পরীক্ষা নিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আরিফা সুলতানা। অভিযোগ উঠেছে, ভিসিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান আন্দোলনকারীদের বাধা সত্ত্বেও বিভাগে প্রবেশ করেন এবং ঢুকার সময় আন্দোলনকারীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-জাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক খান মুনতাসির আরমান বলেন, ‘যারা মাসে-ছয়মাসে একবার ক্লাস নেয় না আজ তারাও ক্লাস-পরীক্ষা নিতে এসেছেন। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কিছু শিক্ষকদের একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতিটি প্রথমত তৈরী করেছেন অধ্যাপক আতিকুর রহমান স্যার। আমরা যখস এখানে (কলা অনুষদের সামনে) বসেছিলাম, তখন তিনি এসেই গেইট ধরে টান দিয়েছেন। আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। আতিক স্যারের কাছে আমার প্রশ্ন হলো, ছাত্রফ্রন্টের একজন সাবেক সভাপতি হিসেবে তিনি আমাদের নৈতিক আন্দোলনের একজন অংশীজন। আমাদেরই আবেগের অংশ। অথচ তার আজকেই এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। যার কারণে শিক্ষার্থীদের সাথেও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হতে পারতো। দ্বিতীয়ত অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ স্যার কয়েকদিন আগে পত্রিকায় লিখেছিলো, আন্দোলন বা প্রতিবাদ যখন শালীনতাকে অতিক্রম করে। কিন্তু আজকে তার শালীলতা কোথায় গেল? কেন তিনি তার শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিলেন, তোমরা ওদের (আন্দোলনকারীদের) ধাক্কা দিয়ে ঢুকো। তিনি শালীনতা নিয়ে কলামে যা লিখলেন আজ তার স্মরণ ছিলো না।’

তবে অধ্যাপক আতিকুর রহমান পোস্টার ছেঁড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং প্রবেশ করার সময় পোস্টার পড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন।

ভিসিপন্থী অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্লাস নিতে চাই, গবেষণা করতে চাই। এখানে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই।’

এছাড়াও আন্দোলনে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেশনজট তৈরী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে দাবি করে আন্দোলনকারীদেরকে আলোচনার আহ্বান জানান ভিসিপন্থী ‘অন্যায়ের বিপক্ষে ও উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ শিক্ষক ব্যানার। জাবি শাখা ছাত্রলীগ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি থেকে ফিরে আসতে আন্দোলনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

এদিকে অবরোধ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার, অমর একুশে এবং ডেইরি গেইট ও প্রান্তিক গেইট প্রদক্ষিণ করে ভিসির বাসভবনের সামনের রাস্তা হয়ে পুরাতন রেজিস্টারের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনকীরা। এর আগে কিছু সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।

সমাবেশে আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস টানা তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারেও সর্বাত্মক ধর্মঘটের আহ্বান জানান। এছাড়াও যতই বাধা আসুক ভিসি অপসারণ বা পদত্যাগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তারা জানান।’

Share this post

scroll to top