বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শরীরের কোনো অবস্থাতেই অবনতি হয়নি।
আজ সোমবার বিএসএমএমইউ’র ডা: মিল্টন হলে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুবুল হক বলেন, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি এবং উনার পরিবার কিছু কথা বলেছেন। মূলত এর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্যই আমাদের আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১ এপ্রিল ২০১৯ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় তার শারীরিক সমস্যার মধ্যে ছিল আনকন্ট্রোল ডায়াবেটিস, ক্রনিক রিউেমোটিক আর্থ্রাইটিস, জেনারেল উইকনেস এবং ডেন্টাল প্রবলেম। সেই সময়ে উনার ভর্তির সাথে সাথেই একটা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত তদারকি করা হয়। প্রতিদিন ব্লাড প্রেসার ও টেম্পারেচার মাপা হয়। প্রতিদিন দুইবার তার ব্লাড সুগার মাপা হয় এবং সে অনুযায়ী ইনসুলিন ইনজেকশন দেয়া হয়। একদিন পর পর ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। মেডিকেল বোর্ড একসাথে বা প্রয়োজনে আলাদাভাবে তার চিকিৎসা করেন।
প্রায় সময় ডাক্তাররা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে পারেন না অভিযোগ করে মাহবুবুল হক বলেন, আমাদের অফিস সময় সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তবে একটা বিষয় বলতে চাই, প্রায় সময় ডাক্তাররা কেবিনে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখার করার সুযোগ পান না। তার কাছ থেকে পূর্বে অনুমতি নিতে হয়। বিশেষ করে দেড়টা বা তার পরে উনি সময় দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সময়ে উনার দেখা পাওয়া যায় না। অনেক সময় আমাদের বোর্ডের চিকিৎসকগণ সাড়ে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও উনার সাথে দেখা করার সুযোগ পাননি।
বিএসএমইউ হাসপাতালের পরিচালক আরো বলেন, তার আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসার জন্য আমাদের চিকিৎসকরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা হলো এন্টি-ভাইরাস কিছু ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। এই বিষয়ে বেশ কিছু দিন আগে উনাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উনার সম্মতি পাওয়া যায়নি। তাই আগের নিয়ম অনুযায়ী উনার চিকিৎসা চলছে। সর্বোপরি ভর্তির সময় থেকে সাত মাস ধরে উনার শরীরের কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু উনার শরীরের কোনো অবস্থাতেই কোনো অবনতি ঘটেনি। এ পর্যন্ত উনার চিকিৎসা ভালো হচ্ছে।
বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা: জিলন মিয়া সরকার বলেন, ম্যাডামের (বেগম জিয়া) চিকিৎসা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট, ম্যাডাম নিজে সন্তুষ্ট। ম্যাডামের দুজন পছন্দের চিকিৎসক সব সময় আমার সাথে যান। উনারা দুজন থাকলে ম্যাডাম খুশি হন।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আমরা তাকে দেখি। এই বুধবার আমি তাকে দেখেছি। অভিযোগ সবাই করতে পারেন, এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই।
ডা: জিলন আরো বলেন, আমি বোর্ডের অন্যান্য ডাক্তারদের সাথে নিয়ে প্রায়দিনই ওনাকে দেখি। প্রতিদিন দেখা হয় না। কারণ সময় এর একটা ব্যাপার আছে, রোগীর সময়ের ব্যাপার আছে, রোগীকে প্রস্তুত হতে সময় লাগে।
তিনি বলেন, উনি (বেগম জিয়া) বারোটার আগে সাধারণত প্রস্তুতি শুরু করেন না। ওনার প্রস্তুত হতে হতে প্রায় একটা-দেড়টা বাজে। একজন অসুস্থ মানুষের লাইফস্টাইল অনেক রকম হয় এটা আমি স্বাভাবিক মনে করি। এসব বিষয়গুলো সম্মান করেই আমাদের চিকিৎসা করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ম্যাডাম আমাদের সাথে সব সময় হাসিখুশি কথা বলেন। ম্যাডামের যে সমস্যাটা এটা ২৮ বছরের সমস্যা। এটা কখনোই সম্পূর্ণরূপে ভালো হওয়া সম্ভব না। এটা কোনোদিনও ভালো হবে না, চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।