মিয়ানমারে বিপুলসংখ্যক সেনা-পুলিশ নিহত

রাখাইনে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের কমপক্ষে ৫০ জন পুলিশ-সেনা সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মিয়ানমার সেনাদের গুলিতে তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। এতে ওই অপহৃত সেনা-পুলিশের অনেকেই মারা গেছে বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি।

তারা জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে দু’টি নৌকা ডুবে যায় এবং একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের দাবি গুলি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ পুলিশ ও সেনা সদস্যই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দু’জন মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেননি।
এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি বিদ্রোহীদের দমন করতে হাজার হাজার সেনা সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে নতুন করে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাখাইনে। রাখাইনে রাখাইন বিদ্রোহীরা রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার একটি ফেরিতে ঘেরাও করে তারা ওই পুলিশ ও সেনা সদস্যদের অপহরণ করে। এর ফলে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় ওই রাজ্যে এক অশান্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার সেনা দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে।

জবাবে আরাকান আর্মিও সহিংস হয়ে উঠেছে। তারা বাড়িয়ে দিয়েছে অপহরণ। ব্যবহার করছে ভয়াবহ বিস্ফোরক ডিভাইস। শনিবার সকালে আরাকান আর্মি একটি নদীর তীরে অবস্থান নেয়। ওই নদীতে রাজ্যের রাজধানী থেকে উত্তরে অফ ডিউটিতে ছিল একটি ফেরি। তাতে ছিল পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। এ সময় তাতে গুলি ছোড়ে বিদ্রোহীরা। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জওয়া মিন তুন বলেন, এলোপাতাড়ি গুলিতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ফেরিটির ডকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এ সময় তাদের কমপক্ষে ৪০ জনকে ফেরি থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ১০ জন সেনা সদস্য। ৩০ জন পুলিশ ও দু’জন স্টাফ। পরে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিদ্রোহীদের অবস্থান নির্ধারণের জন্য কর্তৃপক্ষ হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে। তারা একটি বিশাল দলকে নদী পার হতে দেখেছে।

সেনাবাহিনীর এ অভিযোগের জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে আরাকান আর্মির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এর দুই সপ্তাহ আগে সন্দেহজনক বিদ্রোহীরা একটি স্পোর্টস টিমের সাজে একটি বাসে হামলা চালায়। তার পর রাখাইনের কয়েক ডজন অগ্নিনির্বাপক ও বেসামরিক লোকজনকে অপহরণ করে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব, রোহিঙ্গা বিরোধী যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় কমপক্ষে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। নির্যাতন ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও।

সূত্র : রয়টার্স ও এএফপি

Share this post

scroll to top