মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টেংগারচর ইউনিয়নের হাজী কেরামত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গত মঙ্গলবার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে আরমান হোসেন (২০) নামে এক বখাটে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা আরমানকে আসামি করে গজারিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন, ঘটনায় প্রায় তিনটি পার হলেও তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা না করে স্থানীয়ভাবে শালিশ বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসা করার পরামর্শ দিয়েছেন গজারিয়া থানার ওসি হারুন অর রশিদ।
সরজমিনে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর সাথে করা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে স্থানীয় আব্দুর রব এর ছেলে আরমান হোসেন (২০) তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে বিরক্ত করতো। সম্প্রতি গোসল করতে পুকুর পাড়ে গেলে সেখানেও আরমান তার সাথে অশোভন আচরণ করে। এ ঘটনায় সে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানালে আরো ক্ষিপ্ত হয় আরমান। এ ঘটনার পর দিন বিদ্যালয়ে যাওয়া পথে আরমান তাকে কুপ্রস্তাব দেয় কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় গাছের ডাল দিয়ে আরমান তার গায়ে খোঁচা দেয় । এ ঘটনায় পরদিন আবার একইভাবে বিদ্যালয়ে যাবার পথে তার গলায় গামছা পেচিয়ে ধরে আরমান। ওই ছাত্রী বাসায় ফিরে বিষয়টি তার মাকে জানালে, আরমানের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি অবহিত করেন তিনি। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ওই ছাত্রী বিদ্যালয় থেকে বাড়ী ফেরার পথে বখাটে আরমান তাকে গাছের ডাল দিয়ে মারধর করে রাস্তা থেকে তাকে উঠিয়ে কালভার্ডের নিচে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এসময় ওই ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে পালিয়ে যায় আরমান। এ ঘটনায় আতংকিত হয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারায় ওই ছাত্রী।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ছাত্রীর বাবা ঘটনাস্থলে এসে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি মঙ্গলবার বিকেলে বখাটে আরমানকে আসামী করে গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তবে আসামী আটক না হওয়ায় হতাশ তিনি। মেয়েটির বাবা জানান, অভিযোগ তুলে নিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাকে চাপ দিচ্ছেন। এ ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করলেও তাকে গ্রাম্য শালিশ বৈঠকে ঘটনাটি মীমাংসা করে তিনি বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গজারিয়া থানার ওসি সামাজিক দিক বিবেচনা করে তাকে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ওই ছাত্রীর মা জানান, মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য আর এ ঘটনার পর লোকলজ্জার ভয়ে বাসা থেকে বের হতে পারছেনা মেয়েটি। তিনি জানান, মানুষিকভাবে আঘাত পাওয়ায় এখন সামান্য কথাতেও ভয় পাচ্ছে সে।
হাজী কেরামত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম জানান , ঘটনাটার সময় তিনি ট্রেনিং-এ ছিলেন তবে খবর পেয়েই বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন তিনি। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রীর বাবা মা’কে ডেকে এনে কথা বলেছেন তিনি। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানো হয়েছে। মেয়েটিকে যথারীতি আগের মত বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তার পক্ষে রয়েছে।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিম উদ্দিন জানান, ইভটিজিং প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন তারা। এ ঘটনায় জড়িত আরমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।