বাল্যবিয়ের কারণে ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়

স্টাফ রিপোর্টার : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ে একটি বড় বাধা। বাল্যবিয়ের কারণে ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। আজ বুধবার ময়মনসিংহ টাউন হলে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন। জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি ও রাইট হেয়ার রাইট নাউ বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ময়মনসিংহ টাউন হলে এই আলোচনা সভা হয়। এই উপলক্ষে রোড শো, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনাব অমর কান্তি বসাক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি)ময়মনসিংহ, বিশেষ অতিথি জনাব শেখ হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সদর ময়মনসিংহ, জনাব মো: রফিকুল ইসলাম,জেলা শিক্ষা অফিসার, ময়মনসিংহ এবং অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী, কিশোর কিশোরী, ইয়ুথ এ্যাডভোকেট, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দসহ ও ব্র্যাক কর্মকর্তাবৃন্দসহ প্রায় ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক জেলা প্রতিনিধি ফারহানা মিল্কী।

জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় “কন্যা শিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে একটি রিকশা র‌্যালি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে। এরপর ময়মনসিংহ টাউন হলে বাল্যবিবাহ ও নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির জনাব আমেনা আক্তার , আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। এরপর রাইট হেয়ার রাইট নাউ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন এ্যাডভোকেট সারাবান তোহরা জামান।

প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব সমর কান্তি বসাক ( শিক্ষা ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি) বলেন, ‘ মেয়েদেরকে বাবা মাকে বোঝাতে হবে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে না দিতে । নারীর্ ানর্যাতনের ক্ষেত্রে মায়েদের সচেতন হতে হবে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজ বুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট বয়সের আগে ফেইজবুক ব্যবহার না করা।’
বিশেষ অতিথি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলা সব চেয়ে জরুরী ডাক্তার , ইাঞ্জনিয়ার হওয়ার চেয়ে।”
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ টেকনোলজি ব্যবহারের জোড় দিতে হবে কারন এতে পেশিশক্তির চেয়ে মেধা শক্তির দরকার বেশি । যেটা বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে ।’

ইউনিসেফের তথ্যমতে, ৫ ভাগের ১ ভাগ মেয়ে ১৫ বছরের আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হয় এবং ১৮ বছরের আগেই গর্ভধারণ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীদের শতকরা ২০ ভাগ ১৫ বছর বয়সের আগেই মা হয়। বাল্যবিয়ের কারণে শতকরা ৪৫ ভাগ কম ওজন শিশুর জন্ম দিচ্ছে। এই অপরিণত মায়েরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শতকরা ৫ জন মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।

বাল্যবিয়ে বা অপরিণত বয়সে বিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ একটি সমস্যা যা জেন্ডারসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বাল্যবিয়ে নারীর স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত অপরিণত গর্ভধারণ, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি, ক্যান্সার ঝুঁকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ এই ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা। যে কিশোরীকে পরিপূর্ণতা আসার আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়, তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়।

Share this post

scroll to top