বাংলাদেশ ক্রিকেটের অচলাবস্থা নিরসনে মাশরাফি মতুর্জাকে দায়িত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মাশরাফি ধর্মঘটের ডাক দেয়া ক্রিকেটারদের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা – এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ক্রিকইনফো এই খবর জানিয়েছে।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাহী পরিচালক নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন জানান ক্রিকেটারদের সাথে বৈঠকের বসতে চান তিনি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোচনার সময় বেঁধে দেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেলে বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনের পর আমি সিনিয়র একজন ক্রিকেটারের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে যেকোনো সময় আমাদের সাথে বসবে। আশা করছি, বিকেল ৫টায় আমরা তাদের সাথে বৈঠকে বসব।’
এছাড়া বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম জানিয়েছেন, চলমান সঙ্কট নিরসনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাশরাফির সাথে কথা বলতে বলেছেন। এরপর ‘প্রধানমন্ত্রী সমস্যাটি সম্পর্কে জানতে চান। পরে প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে বলেন ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে।’
তবে মাশরাফি ক্রিকেটারদের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিনা – তা এখনো জানা যায়নি। তবে সবদিক বিবেচনা করা বোঝা যাচ্ছে, বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের মধ্যের এই দ্বন্দ্ব ইতিবাচক দিকেই যাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই ক্রিকেটারদের ১১টি দাবির একটি মেনে নিয়েছে বোর্ড। মঙ্গলবার রাতে এই দাবি মেনে নেয় বোর্ড। দাবিটি হলো – ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ট্রান্সফার সিস্টেমটি ফিরিয়ে আনার।
গত সোমবার বিকেলে বেতন ও ভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় সাকিবরা। মিরপুরে শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন অ্যাকাডেমি মাঠে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি তুলে ধরেন। এতে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমসহ ৩০ জন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের সাথে ছিলেন না মাশরাফি মর্তুজা। পরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ক্রিকেটারদের দাবি আদায়ে সাথেই আছেন তিনি।
এমন সময়ে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে যখন আগামী মাসেই একটি দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের।
এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি বৈঠকে বসেন বিসিবির কর্মকর্তারা। পরে সংবাদিকদের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সাকিব-তামিমদের আচরণে আমরা অসন্তুষ্ট। এটা মোটেও কাম্য নয়। আমরা এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা আমাদের সাথে (দাবিগুলোর বিষয়ে) আলোচনা করতে পারত। তাদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অতীতে তাদের সব চাওয়া আমরা পূরণ করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের না জানিয়ে হঠাৎ খেলা বন্ধ করে দেয়া একটা চক্রান্ত। জিম্বাবুয়ের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বে নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে। কারা এর সাথে জড়িত আমরা তা জানি। তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমার মতে, দু’একজন ক্রিকেটার এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাকিরা না বুঝে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
ক্রিকেটারদের ১১টি দাবি –
১. ক্রিকেটারদের হাতে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা কোয়াব-এর নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার দেয়া।
২. ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সুনির্দিষ্ট পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়া।
৩. এবারের আসরের পর থেকে পূর্বের নিয়মে বিপিএল আয়োজন এবং দেশীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি।
৪. প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের ম্যাচ ফি ১ লাখে উন্নীত করা এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন ৫০% বৃদ্ধি । ১২ মাস কোচ, ট্রেনিং এর নিশ্চয়তা।
৫. প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মানসম্মত বল ব্যবহার, দৈনিক ভাতা বাড়ানো, ক্রিকেটারদের যাতায়াতের প্লেন ভাড়া, হোটেলে জিম ও সুইমিংপুল এবং ক্রিকেটারদের বাস উন্নয়ন করার দাবি।
৬. কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ করা এবং একইসাথে চুক্তির আওতায় বেতন বৃদ্ধি করা।
৭. মাঠকর্মী, স্থানীয় কোচ, আম্পায়ার, ফিজিও ও ট্রেইনারদের সম্মানী বৃদ্ধি করা।
৮. প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের মতই আরো একটি করে ৫০ ওভার ও ২০ ওভারের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজন।
৯. ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য নির্ধারিত সময়সূচি।
১০. প্রিমিয়ার লীগের বকেয়া টাকা সময়মত পরিশোধ করা।
১১. যেকোন দুটি বিদেশী ফ্রাঞ্চাইজি লীগ খেলার বিধিনিষেধ শিথিল করা।