১১ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত। গতকাল দ্বিতীয় দিনেও ক্রিকেটারদের সাথে এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা হয়নি। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ও তার সাথে থাকা বোর্ডের পরিচালকেরা এ ইস্যুকে পাত্তাই দিচ্ছে না। গতকাল বোর্ডের কয়জন পরিচালক বসেছিলেন বোর্ড সভাপতির সাথে বিসিবিতে (জরুরি বোর্ড মিটিং নয়)। সেখান থেকে বের হয়ে যে সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতি যা বলেছেন, সেটা ঝামেলা সহজেই মিটে যাবে বলে আভাস মিলছে না। ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে সুরাহা করবেন এমন কোনো আশ্বাস না দিয়ে বরং এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এমনকি এর পেছনে কারা কারা জড়িত। তারা বোর্ডের ভেতর ও বাইরে থাকা- যারাই হোক না কেন, তাদের খুঁজে বের করার দৃঢ়তা দেখান। এতে করে আন্দোলনরত ক্রিকেটারদের ন্যায্য দাবির পথে থাকা আন্দোলন কঠোর চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পড়ল। তবে পাপন আশাপোষণ করেন, ভারত সফর যথাসময়েই হবে। তবে ক্রিকেটাররা যদি বৃহস্পতিবার থেকে নির্ধারিত জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ডে অংশ না নিয়ে এবং ভারত সফরের ক্যাম্পে যোগ না দেয়, তাহলেও নিজেদের করণীয় কিছু দেখছেন না বিসিবি সভাপতি। সে ক্ষেত্রে ভারত সফর নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা থেকেই গেল।
সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য দেয়া পাপন বলেন, ‘ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির অনেকগুলোই পূরণ করা হয়েছে বা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু ক্রিকেটারদের ধর্মঘট এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। কারণ দাবি ওরা জানাতেই পারে। খুবই ন্যাচারাল। কিন্তু সেটার জন্য স্ট্রাইকে যেতে হবে বা গেছে এটা কষ্টের ব্যাপার। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না ওরা এমনটা করতে পারে।’ ক্রিকেটারদের সাথে আন্তরিকতার কথা তুলে পাপন বলেন, ‘ওদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। আমার চেয়ে বেশি মনে হয় না কেউ যোগাযোগ রাখে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে সব কিছুতে কথা হয়। আমি তো বহুদূর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ওদের সুযোগ আছে। বলার কিছু থাকলে ওরা বলতে পারত। ওরা তো চাইলেই পাবে, আসেনি কেন? আমাদের কাছে চাচ্ছে না কেন? ফোন ধরছে না কেন? সব কিছুর পেছনে কারণ আছে। আমাদের কাছে না গিয়ে মিডিয়ায় বলেছে, সেটির পেছনে বিশেষ কারণ আছে। আমাদের সুযোগ না দিয়ে মিডিয়ায় গিয়েছে। এটি বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ বলেই আমি ধরে নিচ্ছি।’
পাপন বলেন, ‘ওরা যা করছে বা হচ্ছে এটা নিশ্চিত পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। একজন লোকই আছেন, যিনি বারবার এসব করছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত চলছে। এই ষড়যন্ত্রের কথা সরকার থেকে শুরু করে সবাই জানে। সব ক্রিকেটার এটির সাথে জেনে শুনে জড়িয়েছেন এটা ঠিক না। ১-২ জন জানতে পারে। এই মুহূর্তে বের করা দরকার, কারা এই কাজ করছে। কিছু দিনের সময় চাচ্ছি আপনাদের কাছে। সব বের করে ফেলব।’
এ দিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিতে ক্রিকেটারদের এখন ভেনুতে থাকার কথা। ওই রাউন্ডের খেলা ২৪ অক্টোবর শুরুর শিডিউল। খেলা চারটি হবে কক্সবাজারে দু’টি ও বগুড়া ও রাজশাহীতে। কিন্তু এখনো আন্দোলনে তারা। ফলে অনিশ্চয়তায় এ ক্রিকেট। নাজমুল হাসান বলেন, ‘খেলোয়াড়রা না খেললে খেলবে না! আমাদের কিছু করার নেই। ওরা জাতীয় দলের ক্যাম্পে গেলে ভালো, না গেলে যাবে না।’ তবে তিনি বারবার এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা নিজেরাও জানে না। তারা কী করছে! হয়তো ২-১ জন জানতে পারে। তবে কেউ কেউ বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংস করে দিতে চাইছে। আমরা খুব শিগগিরই এসব ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করব।’ তবে বোর্ড সভাপতি হতাশা ব্যক্ত না করে দৃঢ়তার সাথেই জানালেন আশার কথা- ‘আমার দুয়ার ওদের জন্য খোলা। ওরা যদি আমার কাছে আসে, অবশ্যই কথা হবে। আমি তো কথা বলতেই চাই। আমি আশা করি ক্যাম্প চলবে, ভারত সফরও যথাসময়েই হবে।’