স্টাফ রিপোর্টার : বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ আবারো নতুন উদ্দ্যমে ফিরে আসছে। বিভাগীয় নতুন শহর বাস্তবায়নে দুটি প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে নতুন করে জমি অধিগ্রহনের কথা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে খাস জমি থেকেই অধিগ্রহনকৃত বেশির ভাগ জমি নেয়া হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহন করা হলেও মানুষের বসত বাড়ি যাতে রক্ষা হয় সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
১৯ অক্টোবর শনিবার বিকালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার জয়বাংলা বাজারে অধিগ্রহনকৃত এলাকায় এক সমাবেশে এতত্য জানান ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান। ইউএনও জানান, টেমস নদীর দুই পাশে ইংল্যান্ডে রাজধানী লন্ডন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা লন্ডন শহরের আদলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাশে হবে ময়মনসিংহ শহর।
সমাবেশে ইউএনও শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন করে ক্রমান্বয়ে ৯৫০ একর ও ২ হাজার ৯৮৩ একার জমি অধিগ্রহনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ৯৫০ একর জমির যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটি বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রশাসনের। ৯৫০ একর ওই জমির বেশির ভাগই খাস জমি। ওই জমি অধিগ্রহন করা হলে মানুষের কোন ক্ষতি হবে না। বাতিল হওয়া সাড়ে ৪ হাজার জমির চর এলাকায় ৬ থেকে ৭টি গ্রাম ছিল। নতুন যে প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে সেখানে রয়েছে তিনটি গ্রাম। গ্রামগুলো হচ্ছে চর জেলখানা, গোবিন্দাপুর ও পাড়া লক্ষীর আলগী।
ইউএনও তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, ৯৫০ একর জমি প্রাথমিক পরিকল্পনায় থাকলেও পাশাপাশি ২ হাজার ৯৮৩ একর জমি নিয়েও একটি পরিকল্পনা আছে। সে জন্য ওই এলাকায় একটি জরিপ চালাতে হতে পারে। তবে ইউএনও এ বক্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সমাবেশে উপস্থিত মানুষ জানায়, তাঁর ৯৫০ একর জমির বাইরে অন্য কোন জমিতে জমিতে জরিপ চালানোর পক্ষ নন। পরে ইউএনও বলেন,যা কিছু হবে তা আপনাদের ভালর জন্য। চর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে কোন সিন্ধান্ত নেওয়া হবে না। জমি অধিগ্রহন হলে জমির দাম প্রকাশ্যে দেওয়া হবে। কেউ ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন। তাঁরা চরবাসীর পক্ষে ইউএনওকে অনুরোধ করেন, অধিগ্রহনে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
চার বছর আগে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন হয়। এর কয়েক মাস পর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন ময়মনসিংহ বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ও আধুনিক শহর গড়ার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ মূল শহর ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহনের সিন্ধান্ত নেয়। ওই জমির মধ্যে অসংখ্য মানুষের বাড়ি-ঘর, মসজিদ মাদ্রাসা ও কবরস্থান থাকায় চর এলাকার মানুষ নিজের বসত বাড়ি রক্ষার জন্য আন্দোলনে নামে। দুই বছরের বেশি সময় আন্দোলনের পর সরকার ওই জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। সরকারি ভাবে ওই প্রকল্পটি বাতিল করার পর আবারও নতুন ভাবে জমি অধিগ্রহন করে নতুন শহর ও বিভাগীয় কার্যালয়সমূহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে।
চর এলাকার বসত ভিটা রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, নতুন প্রকল্প নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান চর আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার পর সিন্ধান্ত হয় শনিবার এ বিষয়ে চর এলাকার সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে ইউএনও কথা বলবেন। সে সিন্ধান্তে শনিবার বিকালে জয় বাংলা বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগ বাস্তবায়নের পর পর জমি অধিগ্রহন করার সিন্ধান্ত হওয়ার পর চর এলাকার মানুষ নিজেদের বসত বাড়ি রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন করে। চর এলাকার মানুষের দাবি, তাঁরা নতুন শহরের বিপক্ষে নয়।