পটুয়াখালীতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের মধ্যে কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশেষ গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় একজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে সরকারি কলেজ ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ চত্বরসহ শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, পটুয়াখালী বিশেষ গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য মো. জামাল উদ্দিন (৩০), ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজ, সম্পাদক আরজু, ছাত্র সুমন আহমেদ ওরফে ড্যান্স সুমন ও আল-আমিনসহ ৫-৬ জন।
শনিবার সকালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বেলাল সিকদার রিয়াজ ও সম্পাদক আবুল বশার আরজু অভিযোগ করে যুগান্তরকে জানান, সরকারি কলেজের মূল ফটকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ব্যানার প্রদর্শন করে কলেজ ছাত্রলীগ।
রাতে জামায়াত-শিবির সমর্থিত ছাত্ররা সেই ছবি ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এর জেরে শনিবার সকালে কলেজের সাধারণ ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করার উদ্যোগ নিলে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা বিক্ষোভে বাধা দেয়। এ সময় উভপক্ষের মধ্য বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মইন খান চানুর নেতৃত্বে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে চানুর লোকজন মারধর করে।
এদিকে ছাত্রলীগের মধ্যে মারধরের ঘটনার তথ্যচিত্র ধারণ করতে গিয়ে এক গোয়েন্দা পুলিশ আহত হন। এতে ওই পুলিশ সদস্যের ডান কান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তবে পুলিশ সদস্য জামালকে কোনো পক্ষ হামলা করেছে তা নিশ্চিত করা যায়নি।
পরে খবর পেয়ে পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ঘটনার পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে আহতদের মধ্যে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজ, সম্পাদক আরজু ও ছাত্র সুমনসহ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে জরুরি বিভাগে উভয় গ্রুপের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের মহড়া এবং ধস্তাধস্তির ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ গোটা মেডিকেল ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন সাধারণ রোগীরা।
পরে পুলিশের কয়েকটি দল মেডিকেল ক্যাম্পাসে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরিস্থিতি শান্ত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ ও আরজুকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এছাড়া উন্নত চিকিৎসা ও পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে সুমনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের কয়েকটি দল কলেজ চত্বরে টহলসহ উপস্থিত রয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মইন খান চানুর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে জানান, ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে একটি ইস্যু তৈরি করে এ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। আমি বা আমার কোনো লোক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ে নাই।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান সিকদার ও সম্পাদক ওমর ফারুক ভুঞা জানান, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই জামায়াত বিএনপির ক্যাডাররা কলেজ ছাত্রলীগ
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আহত করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি। এ সময় তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
সদর থানা ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।