স্টাফ রিপোর্টার : মাত্র ৫ দিন বয়সী নবজাতক সেলিনাকে রাস্তায় ফেলে চলে যান বাবা-মা। পেছনে ফিরেও দেখেননি হয়ত সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া নিজের সন্তানকে। মনে হয় শিশু হওয়ায় সেলিনা তার বাবা মার মন জয় করতে পারেনি। না হয় বাব-মার চোখে এই অবুঝ শিশুটি ছিলো তাদের জন্য অভিশাপ। কিন্তু না, এই শিশুটিই দীর্ঘ ৪২ বছর পরে সেলিনা নামে বাবা-মার খোঁজে জামালপুর-ময়মনসিংহ জেলায় পথে পথে বিচরণ করছে। কিন্তু আদৌ কি খুঁজে পাবে তার বাবা-মাকে? বাবা-মা’ই কি ফেলে দেয়া এই শিশুটির কথা মনে রেখেছে? হয়তবা বাবা-মা ধারণা হতে পারে যে, তাদের সন্তান কবেই যেন শেয়ালের পেটে ঢুকে গেছে! এখনও বেঁচে রয়েছে এমন চিন্তাটি তাদের মাথায় এখনও রয়েছে? তাদের অভাগা শিশু সন্তান এখনও বেঁচে রয়েছে এই কল্পনা কি কখনও করেছেন নিশ্চয়ই না। বাবা-মা হয়তবা এখনও সেই সুখেই দিন কাটাচ্ছে। প্রতিটি দিন তাদের কাছে আনন্দে কাটলেও এই সেলিনার প্রতিটি দিন কাটে স্বপ্নে, বাবা মাকে পাওয়ার আশায়। কিন্তু সেই বাবা-মা কোথায় আছেন তা এখনও কেউ জানেই না।
সময়টা ১৯৭৬ সাল। বাবা-মা হীন জামালপুরের রাস্তায় পড়ে থাকে একটি সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কেউ শিশুটিকে নিচ্ছে না। অবশেষে এই শিশুটির দিকে চোখ পড়ে এক বিদেশী দম্পত্তির। অত:পর মায়ার বশে এই কানাডিয়ান দম্পত্তি শিশুটিকে নিয়ে যান তাদের সাথে। বিদেশেী দম্পত্তি শিশুটির নাম দেন তারা (স্টার)। কেটে গেছে ৪২ বছর। সেই তারা এখন সেলিনা। থাকনে জার্মানীতে, আছে এক ছেলে আর এক মেয়ে। ৪২ বছর পর সেই সেলিনা বাংলাদেশে এসেছেন তার বাবা-মাকে দেখতে। গত মঙ্গলবার সেলিনা গিয়েছিলেন জামালপুরের সরিষাবাড়ি। গিয়েছেন গাইতাপাড়া গ্রামেও। কিন্তু তার বাবা মা’র দেখা আর পাননি।
আবেগাপ্লুত হয়ে সেলিনা জানান, তার কানাডিয়ানেরপালিত পিতা তাকে ছোট বেলাতেই জানিয়েছিলেন যে তার বাড়ি বাংলাদেশে। ৫ দিন বয়সের সময় তাকে পথে রেখে ফেলে যায় তার বাবা-মা। এরপর এক লোক তাকে কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঐ সময় সরিষাবাড়ির ঐ পথেই যাচ্ছিলেন এক কানাডিয়ান দম্পতি। সেই কানাডিয়ান দম্পতি তারাকে নিয়ে কানাডায় চলে যান। এরপর তারা কানাডাতে সেলিনা নামে বড় হতে থাকে। সেলিনা এক পর্যায়ে তার পালিত বাবা’র সাথে কানাডা থেকে জার্মাানী চলে আসেন। এখানে তিনি বড় হন। বর্তমানে তিন একটি হাসপাতালে চাকুরী করেন। তার সাথে আছেন তার পালিত বাবা আর মা। কিছুটা বড় হওয়ার পরই সেলিনার পালিত বাবা সেলিনাকে তার আসল পরিচয় জানায়। সেলিনা জানতে পারে সেলিনার বাড়ি বাংলাদেশের জামালপুরের সরিষাবাড়ি। এদিকে সেলিনা বড় হয়। তার এখন ২২ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১৫ বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। বেশ কিছু দিন আগে সেলিনা গুগল সার্চ দিয়ে জামালপুর এর সরিষাবাড়ির ম্যাপ বের করেন। এরপর সে তার জার্মান বন্ধু মার্ক সিয়েরারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ২ সপ্তাহ আগে। বাংলাদেশে এসে সেলিনার পরিচয় হয় ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনের সাথে। দেলোয়ার হোসেনই তাদের মঙ্গলবার এদের জামালপুরের সরিষাবাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু সরিষাবাড়ি গিয়ে গাইতাপাড়া গ্রাম খুজে পেলেও নিজের বাবা, মা’র সন্ধ্যান আর পাননি সেলিনা। সেলিনা বলেন তিনি আরও ২ সপ্তাহ বাংলাদেশ থাকবেন। বাংলাদেশ সর্ম্পকে তিনি বলেন, এদেশর মানুষজন খুব ভালো ও আন্তরিক।