বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর কিভিন্ন ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোতে স্থান করে নিয়েছে আবরার হত্যার বিচার দাবি সহ নানা দেয়ালিখন। সেখানে শিক্ষাথীরা আবরার হত্যার বিচার চাই, ফাসি চাই, জাস্টিস ফর আবরার সহ নানা শ্লোগান ও দাবি তুলে ধরেছেন।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষাথী নওফেল জানান, হলগুলোতে রাজনৈতিক নেতারা সব সময় সেচ্চাচার থাকেন। জুনিয়রদের তারা রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করেন। এর আগেও নির্যাতন করে অনেকের হাত পা ভেঙে দিয়েছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতারা। কারণে অকারণে বিভিন্ন অজুহাত তুলে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে ছোট ঘটনা থেকে আবরার হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর আগের ঘটনাগুলোতে ব্যবস্থা নেয়া হলে আবরারকে হত্যার শিকার হতে হতো না বলে জানান নওফেল। অপর শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান জানান, আমরা আমাদের ৮দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনভাবেই আবরার হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। আবরারকে রাত ৮টার পর থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত নির্যাতন করেছে।
এর আগে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বকশি বাজার মোড় দিয়ে ঢাবির জগন্নাথ হল হয়ে পলাশীর মোড় দিয়ে আবার শহীদ মিনারে এসে মিলিত হন। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি মিছিলও বুয়েট শহীদ মিনার চত্ত্বরে আসেন। পরে তারা ঢাবি ক্যাম্পোসের দিকে ফিরে যান।
এদিকে বিকেল তিনটার সময় আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এসে কথা বলছেন ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড, মিজানুর রহমান।তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিকৃত ৮দফা নিয়ে কথা বলছেন। তিনি জানান, দাবিগুলোর বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে আজ সোমবার সকালে ১৭ ব্যাচের আবরার ফাহাদকে শারীরিক অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যাকণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ছাত্রদের ৮ দফা দাবি ঘোষণা করেছে।
দাবিগুলো হচ্ছে,
খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে তাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিশ্চিতভাবে শনাক্তকৃত খুনিদের আজীবন বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে। দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট জানাতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি। তাকে সশরীরে আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে। একই সাথে ছাত্র কল্যাণ দপ্তর এর পরিচালক ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছে করেছে তা উনাকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সকলের সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
আবাসিক হলগুলোতে র্যাবের নামে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানুল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দি হলের পুর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর বিকেল পাঁচটার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবেব ব্যর্থ হওয়ায় প্রভোস্টকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। মামলা চলাকালীন খরচ এবং আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে হলে হলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখা হয়। জুনিয়ারদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক জোর করে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ের যুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেকোন সময় যেকোন ক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্রদের ভয় প্রদর্শনপূর্বক হল থেকে বিতাড়িত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে শিক্ষাথীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। রাজনৈতিক সংগঠনের এসব কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষাথীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী ৭ দিনের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।