প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রের বিবরণে আবরার হত্যাকাণ্ড

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদের পাশের রুমের একজন ছাত্র অনেকটা ভয়ে গতকাল দুপুরের পর আবরার মারা যাওয়ার আগের সময়ের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, আবরারকে যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডেকে নিয়ে যায় তখন থেকেই তার রুমমেটসহ অনেকেই আতঙ্কে ছিলেন। তারা যে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলবে এমন ধারণা তাদের ছিল না। রাত যখন ২টা বাজে তখন আমাদের একজন সহপাঠী দেখেন আবরারকে তোশকের মধ্যে পেঁচিয়ে নেতারা সিঁড়ির মধ্যে ফেলে গেছেন। তখনো আবরার জীবিত ছিল। ওই সময়ও তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলেও মনে হয় আবরার বেঁচে যেতো। এর আগে নিহতের মামা এ প্রতিবেদককে বলেন, আবরারের মা রোববার রাত ৩টার পর আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, হলে আবরারের কী কেনো সমস্যা হয়েছে। এরপরই তিনি একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে আমাকে যোগাযোগ করতে বললেন। এরপরই আমি সকাল ৬টার দিকে এসে জানতে পারি আবরার রাতেই মারা গেছে।

আবরারকে হত্যাকরা রুমে নিয়মিত মদের আসর : বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যে রুমে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয় সে রুমে নিয়মিত মদের আসর বসত বলে একাধিক শিক্ষার্থী জানান। জানা যায়, ওই রুমে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপ সম্পাদক ও বায়োঃমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশাররফ সকাল এবং প্রত্যয় মুবিন। রোববার সকালে কক্ষটিতে পুলিশ অভিযান চালালে সেখান থেকে কয়েকটি মদের বোতল, চাইনিজ ছুরি এবং পাঁচ-ছয়টি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কিছু স্ট্যাম্প ভাঙা ছিল। হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ওই রুমে সবসময় মদপান চলত। রুমে যারা থাকত তারা রাতে মদ খেয়ে বিভিন্ন সময় চিৎকার-চেচামেচি করত। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে গালিও শুনতে হত। আশপাশের রুমে যারা থাকে তারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারত না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, এটি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এমনকি তারা কাউকে তুলে নিয়ে এসে এই কক্ষে নির্যাতনও করত। তারা টর্চারসেল হিসেবে এই রুমটি ব্যবহার করত।

Share this post

scroll to top