‘ওকে’ বা ‘ঠিক আছে’ সাইন কি প্রকাশ করে!

তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুল একত্রে গোল করে দেখানো মানে ঠিক আছে- যা অনেকের কাছেই খুব জনপ্রিয় একটা ইমোজি। কিন্তু ঘৃণা বা মানহানিকর বক্তব্যের বিরোধী সংগঠন অ্যান্টি-ডিফামেশন লীগ (এডিএল) বলছে, অনেকে এই চিহ্নটি দিয়ে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ প্রকাশ করে। ফলে এটিকে তারা ‘ঘৃণাসূচক চিহ্নের অন্যতম বলে তালিকাভুক্ত করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্বেষ-প্রতিরোধী গ্রুপগুলো বলছে, এই প্রতীকের অনেক বেশি ব্যবহারের ফলে এখন কোন কিছুর অনুমোদন বা ‘ঠিক আছে’ জাতীয় বক্তব্যের প্রকাশও বলা যেতে পারে। সুতরাং এই প্রতীক যারা ব্যবহার করছে, তাদের সম্পর্কে চট করে সিদ্ধান্তের পৌঁছানো ঠিক হবে না বলেই তারা মনে করে।

এডিএলের ঘৃণাসূচক প্রতীকের তালিকায় আরো রয়েছে নিউ নাৎসি প্রতীক পোড়ানো, হ্যাপি মার্চেন্টের ছবি। ২০০০ সাল থেকে ‘ঘৃণার প্রকাশ’ তালিকা তৈরি করতে শুরু করে অ্যান্টি-ডিফামেশন লীগ। তাদের এই তালিকার উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যাতে চরমপন্থিদের নানা চিহ্ন দেখে চিনতে পারে। এখন পর্যন্ত এই তালিকায় ২০০ বিষয় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নাৎসি স্বত্বিকা এবং কু ক্লাক্স ক্লানের জ্বলন্ত ক্রুশ।

”হয়তো অনেক বছর বা দশক ধরে চরমপন্থি লোকজন এসব প্রতীক ব্যবহার করে আসছে, কিন্তু তারা নিয়মিতভাবে নতুন নতুন প্রতীক, মেমে এবং শ্লোগান তৈরি করছে, যা দিয়ে তারা তাদের ঘৃণাসূচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটায়,” বলছেন এডিএলের প্রধান জনাথন গ্রেনব্লাট।

”আমরা বিশ্বাস করি, এসব প্রতীক সম্পর্কে আইনপ্রয়োগকারী এবং পুলিশের পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা উচিত। এর ফলে সমাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘৃণাকারী এসব ব্যক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে প্রথমেই সতর্ক হওয়া যাবে।”

ধারণা করা হয়, সতেরো দশকের দিকে যুক্তরাজ্যে প্রথম হাতের দুই আঙ্গুল একত্রে করে ‘ঠিক আছে’ প্রতীক ব্যবহার করা শুরু হয়। এডিএল বলছে, ‘ওকে’ প্রতীকটি এখন নিজেদের জাহির করার জন্য ডানপন্থীদের কাছে জনপ্রিয় একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে, যারা প্রায়ই এ ধরণের চিহ্ন প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে থাকে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চ মসজিদে যে ব্যক্তি ৫১জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল, আদালতে নেয়ার পর তাকে এই ‘ওকে’ চিহ্ন প্রকাশ করতে দেখা যায়। হত্যাকাণ্ডের জন্য সে দোষী নয় বলে দাবি করে। ডানপন্থী আন্দোলন বিশেষজ্ঞ, ইতিহাসবিদ ড. পল স্টোকার বলছেন, চরম ডানপন্থী ব্যক্তিদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অন্যতম প্রতীক হলো এই ‘ওকে’ চিহ্নটি।

”সেই সব লোকজনের জন্য এটা হচ্ছে একটা সাংকেতিক বার্তা যারা চরম ডানপন্থীদের কাজকর্ম সম্পর্কে জানে এবং বুঝতে পারে” তিনি রেডিও নিউজবিটকে বলেছেন। ”এই প্রতীক দিয়ে গোঁড়া সমর্থকদের বোঝানো হয় যে, তিনি তাদেরই একজন।”

এই লেখক বলছেন, চরমপন্থিদের মধ্যে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার যে, এই প্রতীকটি তারা প্রকাশ্য স্থানে দেখাচ্ছে এবং পরিষ্কারভাবে তার অর্থ ঘোষণা করছে।

”ডানপন্থীদের মধ্যে নানা ধরণের প্রতীকের ব্যবহার বাড়ছে। তারা মূলত অনলাইনে সক্রিয় থাকে এবং সাংকেতিক বার্তা এবং মেমে ব্যবহার করে। এগুলো দেখে আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ বলে মনে হবে, কিন্তু আপনি যদি তাদের ভালো করে বিশ্লেষণ করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে, এর বিশেষ মানে রয়েছে।”

অ্যান্টি-ডিফামেশন লীগ এটাও পরিষ্কার করে দিতে চায় যে, এ ধরণের চিহ্ন দেখানোর সবসময় যে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের প্রকাশ, তা নাও হতে পারে। বরং এটাও হতে পারে যে, এর আসলেই অর্থ, ‘সব কিছু ঠিক আছে’।

”এই আঙ্গুলের বার্তার অতিরিক্ত ব্যবহারের পেছনে এখন প্রথাগত উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। ফলে কেউ যদি এই প্রতীকটি ব্যবহার করে, তাহলেই প্রথমেই এটা ধরে নেয়া ঠিক হবে না যে সে কাউকে ব্যাঙ্গ করার জন্য নাকি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য প্রকাশের চিন্তা থেকে প্রতীকটি ব্যবহার করছে।” সূত্র : বিবিসি।

Share this post

scroll to top