ক্যাসিনো চালাতে ক্লাবের জায়গা ভাড়া দিয়েছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডাইরেক্টর ইন–চার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। সেখান থেকে পেতেন নিয়মিত মাশোহারা। তিনি এখন গ্রেপ্তার আইন–শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তবে এই ঘটনায় বিব্রত হওয়ার কিছু দেখছেন না বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তবে তিনি জানিয়েছেন লোকমানের সঙ্গে যদি ক্যাসিনোর সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তাঁর বিচার হবে।
দুদিন ধরেই লোকমানকে নিয়ে তুমুল আলোচনা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। ক্রিকেটের অস্বস্তিটা অনেক বেশি। কারণ তিনি বোর্ড পরিচালক। ক্রিকেটের অনেক নীতি–নির্ধারণের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন এই লোকমান। তিনি ছিলেন বোর্ডের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের প্রধান। এখন পরিচালক থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী—বিসিবির সবাই বেশ অস্বস্তিত আছেন লোকমানকে নিয়ে। তবে লোকমানকে নিয়ে বিব্রত হওয়ার কিছু দেখছেন না বোর্ড প্রধান নাজমুল। আজ গুলশানে তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বললেন, ‘দেখুন এখানে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। যেটা বুঝি যে কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হবে। এটাতে তো কারও কোনো দ্বিমত হওয়ার কিছু নেই। এটুকু জানি যে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপটি নিয়েছেন এটাকে ভালো না বলার কোনো কারণ নেই। লোকমান হোসেন ভুঁইয়া (ক্লাব) ভাড়া দিয়েছে। সে যদি ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে এবং সেটির সঙ্গে যদি তার সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে বিচার হবে।’
বিসিবির একজন পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, যেটি দেশের ক্রিকেটেই বিরল। অথচ নাজমুল বলছেন, বিব্রত হওয়ার কিছু দেখছেন না! বিসিবি সভাপতি বলছেন, এখনই লোকমানের ক্যাসিনো-কাণ্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না, ‘বিব্রত না মানে এখনই মন্তব্য করতে রাজি না। আগে জানি কী হয়েছে। আরও নাম আসতে পারে, কারা কারা জড়িত। আগে জানি, বুঝি। এখনই মন্তব্য করার সময় হয়নি। তবে এটা সত্যি যে আমরা জানতামই না এমন কিছু হচ্ছে। যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আমি মনে করি এটাকে পুরোপুরি সমর্থন দেওয়া উচিত দেশবাসীর।’
২০১২ সালের অক্টোবরে নাজমুল হাসানের হাত ধরে ক্রিকেট বোর্ডে এলেও লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ছাত্র জীবন থেকেই। তবে বিসিবি সভাপতিও খানিকটা অবাক হয়েছেন ক্যাসিনোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুর জড়িয়ে পড়ার খবরে, ‘আমি যে লোকমানকে চিনি সে জীবনে মদ খায়নি। সে জীবনে কোনো দিন জুয়া খেলেনি—এটা যেমন সত্যি, আবার এটাও সত্যি যে সে ক্যাসিনো ভাড়া দিয়েছে। এখানে অস্বীকার করার তো কোনো উপায় নেই। সে যদি করে থাকে তাহলে তার বিচার হবে। আমরা তাকে যেভাবে চিনি এবং জানি, সেটাই বললাম। এখন প্রমাণিত হওয়ার আগে তো আমরা কিছু বলতে পারছি না যে আসলে ঘটনাটা কী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, দেশে আইন আছে। তারা আগে দেখুক, বুঝুক। যে দোষ করেছে তার শাস্তি হবে, এটি নিয়ে আমাদের কোনো কিছু বলার নেই।’
প্রশ্ন আসছে লোকমানের অপরাধ প্রমাণ হলে বিসিবি কী পদক্ষেপ নেবে, যেহেতু তিনি বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। নাজমুল বলছেন, ‘আমাদের তো কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কিছু নেই। যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তখন অবশ্যই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এখনই এটা নিয়ে বলা ঠিক হবে না। আমার কথা হচ্ছে যদি কেউ অন্যায় করে থাকে তাহলে তার বিচার হবে। এখানে কোনো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। আমি বিসিবিতেও ছাড় দেব না। বিসিবিতেও কখনো আমি ছাড় দেইনি, এটি হতেই পারে না। এখানে আমাদের কোনো তদারকি নেই। ক্লাবে তাস খেলা হয়, এটি আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। এই তাস খেলা আমি সারা জীবনই দেখে এসেছি। এই তাস খেলা যে এখন ক্যাসিনোতে চলে এসেছে এই ব্যাপারে সত্যি বলছি কোনো ধারণা ছিল না আমার। আমাকে লোকমান কোনো দিন বলেনি যে ক্লাবে একটি ক্যাসিনো আছে। এটা কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার। সে কিন্তু আমার বন্ধু। আমি নিজেও জানতাম না, আমাকে কখনো বলেইনি। এখন সব বের হয়ে আসবে।’