ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের মৃধা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সংগঠিত এ অগ্নিকাণ্ডে ৮ জন ব্যবসায়ীর ১৪টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভস্মিভূত হয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান।
মধুখালী ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডে মৃধা বাজারের সেনেটারী, সিরামিক ও রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী আল মদিনা ট্রেডার্সের সৌরভ মোল্লার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শফিকুল আলম মোল্লার ফার্নিচারের কারখানা, আবুল কাইয়ুমের মুদিখানা ও গোডাউন, শাহজাহান মিয়া রাজুর ডেকোরেশন, ফার্নিচার ও গোডাউন, মো. বাচ্চু শেখের পাটের গুদাম, আকাশের রেডিমেড পোশাকের দোকান, ইসহাক মিয়ার ফার্নিচারের কারখানাসহ রাসেল ও সুশান্তের দোকান মালামাল পুড়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, নতুন মোটর সাইকেল, পাটসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেকে তাদের উপার্জনের অবলম্বন হারিয়ে বিলাপ করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত শফিউল আলম মোল্লা বলেন, রাত ১টার দিকে মৃধা বাজারের টহল পুলিশ প্রথমে বাজারে ধোয়া দেখতে পেয়ে আশেপাশের লোকজনদের ডেকে তুলে। এরপর সংশ্লিষ্ঠ ব্যাবসায়ীদের খবর দেয়। এসময় মধুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলেও তারা প্রায় এক ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে পৌছে। তিনি জানান, বিভিন্ন দোকান খুলেও আগুনের উৎস খুঁজে না পেয়ে তারা পাটের গুদামের তালা ভেঙে দেখেন নিচের দিকে পাটে আগুনের বড় কুণ্ডলী। সেখানে কোন বিদ্যুতের লাইন ছিলো না। কিভাবে আগুন লেগেছে তা তারা বলতে পারছেন না। আগুনে তার ২৭ লাখ টাকার ফার্নিচারের তিনটি কাটার মেশিনসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে তিনি জানান।
আল মদিনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সৌরভ মোল্লা জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মালামাল ছিলো। ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা করতেন।
৭ বছর আগে পার্শ্ববর্তী জামালপুর বাজারে তাদের পাঁচটি পাটের গুদামে আগুন লেগে সব পুড়ে গিয়েছিলো জানিয়ে সৌরভ বলেন, ওই অগ্নিকান্ডের এক বছর পরেই তার বাবা মারা যান। এখন কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন তা বুঝতে পারছেন না।
মধুখালী উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার বলেন, শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে এ আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌছতে বিলম্বের ব্যাপারে তারা বলেন, টহল পুলিশ রাত ১টা ৪৪ মিনিটে আমাদের ফোন দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানানোর পর অতি দ্রুততার সাথে ২ টা ৩ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে কাজ শুরু করি। এখানে আমাদের বিলম্ব কোথায় হলো? ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের টিম আবার সেখানে যাবে। তবে তারা প্রথমে বালিয়াকন্দিতে ফোন দিলে রাস্তা খারাপ থাকায় সেখানকার ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে পৌছতে পারেনি বলে তিনি জানান।
খবর পেয়ে সকালে মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মৃধা বাচ্চু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মানোয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তারা জানান, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে যথাসাধ্য পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর ক্ষয়ক্ষদির পরিমাণ ব্যাপক বলে জানিয়ে তারা বলেন, এব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।