ঢাকাSunday , 22 September 2019
  1. Correspondent
  2. English News
  3. আজকের ময়মনসিংহ
  4. আদালত
  5. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  6. ইসলাম ও জীবন
  7. এক্সক্লুসিভ ময়মনসিংহ
  8. করোনা আপডেট
  9. করোনায় সহযোগীতা
  10. খেলার সংবাদ
  11. চাকুরী
  12. ছবি গ্যালারী
  13. জাতীয় অহংকার
  14. জাতীয় নির্বাচন ২০১৮
  15. জাতীয় সংবাদ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাছের ঘেরের পাড়ে শসাচাষ পাল্টে দিচ্ছে রূপসাপাড়ের চিত্র

Link Copied!

খুলনা মহানগরীর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে নদী রূপসা। নদীটি পার হলেই যে জনপদ তার নাম রূপসা উপজেলা। এ উপজেলার একটি গ্রাম আনন্দনগর। এ গ্রামে রয়েছে ছোট-বড় অনেক মাছের ঘের। একসময় এসব ঘেরের পাড়ে কোনো ফসল চাষ করা হতো না। পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত। এখন এসব মাছের ঘেরের পাড়ে শসাচাষ হচ্ছে। শসা চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি অনেকে বেকার সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছেন।

আনন্দনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজ শসাক্ষেত। ঘেরের পাড়ে সারি সারি মাচায় ঝুলছে শসা আর শসা। এ গ্রামের চাষি মুরাদ লস্কর জানান, এ বছর তিনি ৫০ শতক ঘেরের পাড়ের জমিতে টাকি নামের হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করেছেন। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘেরের পাড়ে দুই হাত দূরে দূরে গর্ত করে শসাবীজ বপন করেন। বীজ বপনের দেড় মাস পর থেকে শসা সংগ্রহ শুরু করেছেন। গ্রামের আড়তে পাইকারি বিক্রেতার কাছে তিনি প্রতি মণ শসা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তার এই ৫০ শতক ঘেরের পাড়ের জমিতে শসা চাষ করতে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। আরো দেড় লাখ টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার।

একই গ্রামের কৃষক জুম্মান লস্কর। তিনিও এ বছর ঘেরের এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে গ্রিন লাইন জাতের শসা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন এবং আরো ৩০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। মুরাদ লস্কর ও জুম্মান লস্কর ছাড়াও আনন্দনগরের চান মিয়া, সানু লস্কর, ইমতিয়াজ লস্কর, আবু সালেহ, লাবলু লস্কর, বনি আমিন, আ: রহমান গাজী ও জাবের লস্করসহ শতাধিক কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় ঘেরের পাড়ে শসাচাষ এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এলাকার কৃষকেরা আরো জানান, মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে ধান ও মাছের পাশাপাশি জমি থেকে একটা বাড়তি ফসল পাওয়া যায়। এতে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত শসা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। ঘেরের পাড়ের মাটি বেশ উর্বর। সেখানে চাষ করা শসাগাছ চার দিক থেকেই সূর্যের আলো পায়। এতে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়। সাধারণত মাছের ঘেরের পাড় উঁচু হয়। তাই বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যায়। এ কারণে বর্ষাকালে ঘেরের পাড়ে খুব সহজে শসা চাষ করা যায়। ঘেরের ভেতর পানির ওপর মাচা তৈরি করে সেখানে শসা চাষ করায় বাড়তি জায়গা লাগে না। ঘেরের পাশে পানি থাকায় শসা গাছে পানি সেচ দিতে সুবিধা হয়। তা ছাড়া ঘেরের পাড়ের শসাগাছের পরিচর্যা করতেও সুবিধা হয়। বসতবাড়ি কিংবা মাঠের চেয়ে ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। ঘেরে শুধু মাছ ও ধান চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, ঘেরের পাড়ে শসা ও অন্যান্য শাকসবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ঘেরের পাড়ে শসার পাশাপাশি আগাম শীতকালীন টমেটো চাষও শুরু করেছেন অনেকে।

রূপসা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার দুর্জনীমহল, ডোমরা, চন্দনশ্রী, ভবানীপুর, পেয়ারা, জাবুসা, আমদাবাদ, দেবীপুর, নৈহাটী, সামন্তসেনা, তিলক, খাজাডাঙ্গা, স্বল্পবাহিরদিয়া, আলাইপুর, পুঁটিমারি, আনন্দনগর, পিঠাভোগ, গোয়ালবাড়িরচর, সিন্দুরডাঙ্গা, নারিকেলী চাঁদপুর, ডোবা, বলটি, নতুনদিয়া, ধোপাখোলা, গোয়াড়া, শিয়ালী ও বামনডাঙ্গা গ্রামের মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে এ বছর শসা চাষ হয়েছে। তবে ঘাটভোগ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে কম সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে এসব গ্রামের কৃষকেরা দারুণ খুশি। মূলত ঘেরের পাড়ে শসাচাষ পাল্টে দিচ্ছে রূপসা উপজেলার অন্তত পঁচিশ গ্রামের চিত্র।

ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত শসা বেচাকেনার জন্য গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে শসার মওসুমি আড়ত। এখন তাই শসা বিক্রি করতে সাধারণত পরিবহন খরচ লাগে না। শসাচাষে মহিলা ও বেকার যুবকসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে এখানকার শসা। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা টাটকা ও তাজা শসা কিনতে পেরে খুশি।

তবে মাছের ঘেরের পাড়ে শসাচাষে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এর মধ্যে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয়। পোকার মধ্যে থ্রিপস পোকা ও মাকড় এবং রোগের মধ্যে ডাউনি মিলডিউ শসার ক্ষতি করে। এ ছাড়া শসাগাছের পাতা ও ফলে অনুখাদ্য বোরন ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাব দেখা যায়। তা ছাড়া নিম্নমানের বীজ ব্যবহারের কারণে অনেকসময় শসার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও খরার কারণে শসাচাষ ব্যাহত হয়।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ফরিদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাছের ঘেরের পাড়ে শসাচাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় দিন দিন শসাচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ উপজেলার প্রতিটি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেন। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে এ বছর কৃষকেরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন। কৃষকদের মধ্যে ঘেরের পাড়ে শসাচাষে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।