কঠিন সময় পার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। দলের বিভিন্নপর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে একের পর এক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ও ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে সংগঠনের ভেতরে। বিতর্কিত নেতাদের এসব অপকর্মে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সংগঠনটির হাইকমান্ড।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে ইতোমধ্যে সংগঠনের দুইজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের আরো বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতা। যেকোনো সময় তাদেরকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এ অবস্থায় দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন গ্রেফতার আতঙ্কে থাকা নেতাদের অনেকে। এ দিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযান নিয়ে শুরুতে প্রশ্ন তোলা হলেও সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যাকেই গ্রেফতার করবে তাকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতাকে অপসারণ করে পরবর্তী দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। দলের সভায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগের কয়েক নেতার নাম ধরে তাদের নানা অপকর্ম তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষনেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার চাঁদাবাজি এবং জুয়া ও ক্যাসিনোর কথা তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলে কোনো অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুয়াড়িদের স্থান হবে না হুঁশিয়ার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন সরকারপ্রধান। সরকারের টানা ক্ষমতার সুবাদে কে কত টাকার মালিক বনে গেছেন, কে কোথায় কী করছেন সেই তথ্য আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থানের পরপরই নড়েচড়ে বসেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বুধবার ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের পরিচালিত একাধিক ক্যাসিনো বারে অভিযান চালান র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় একাধিক হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। তাকে ইতোমধ্যেই সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যুবলীগের প্রভাবশালী এ নেতাকে গ্রেফতারের পর সংগঠনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তীব্র সমালোচনা করেন।
পরদিন ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে শুভেচ্ছাবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সতর্ক করে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পর এবার যুবলীগকে ধরেছি। কাউকে ছাড়া হবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থানের পর শুক্রবার যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামীমকে বিপুল অর্থ ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যাওয়ার পর শূন্য পদটি দেয়া হয়েছে জি কে শামীমকে। শামীম ওই পদ ব্যবহার করেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
সূত্রগুলো জানায়, নানা অভিযোগের পর নগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের গণভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, অভিযোগের প্রমাণ পেলেই সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে। যত শক্তিশালীই হোক কেউ পার পাবে না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত মমিনুল হক সাঈদ প্রকাশ্যে আসছেন না। আবার বনানীর ক্যাসিনোর ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযুক্ত উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে যুবলীগে চরম টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে।
যুবলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, চলমান সঙ্কটে যেকোনো সময় যুবলীগ মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটি ভেঙে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। করণীয় ঠিক করতে যেকোনো সময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করা হতে পারে।
এ ব্যাপারে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, অপকর্ম করে যুবলীগের কেউ পার পাবে না। যত বড় শক্তিশালীই হোক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেই বহিষ্কার করা হবে।