প্রতিনিধিদলের পক্ষে – ডা রাফা বিনতে নূর : WHO অনুযায়ী কোয়ালিটি হেল্থ এনসিওর করতে হলে প্রতি ১০০০০ জনের জন্য অন্তত ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রতি ১০০০০ জনের জন্য ৬ জন ধরা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আছে ১.৮। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিরত চিকিৎসক আছেন প্রায় ২৬০০০। সরকারি পর্যায়ে যত সংখ্যক রোগী দেখতে হয় তার জন্য এ সংখ্যাটা অপ্রতুল। ঐদিকে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দেশে বর্তমানে প্রায় ৯৫০০০ ।
চট্টগ্রাম জেলায় গিয়ে দেখা গেল তারা পদ সৃজনের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। ১৪ টি উপজেলা হেল্থ কম্প্লেক্সে ১২৫ টা পদ ফাঁকা। তারা প্রতি উপজেলায় ১০ টি করে নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাবনা দিবেন এমনটা জানালেন। তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে ১ টি করে মেডিকেল অফিসারের পদ তৈরিতেও আগ্রহ দেখান। এই মূহুর্তে ডেন্টাল সার্জনের পোস্টের ব্যাপারে আগ্রহী নন এমনটা জানান। আমরা চলে আসার পর স্যার নিজেই সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের কাজটিকে এপ্রেশিয়েট করে পোস্ট দেন।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় আমরা প্রথমে ৫ সেপ্টেম্বর যাই। সেদিন দেখা হয় না। পরে ৮ তারিখ এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসি। স্যার বললেন এরকম চিঠি প্রায়ই আসে যেটায় শূণ্য পদের চাহিদা চাওয়া হয়। কিন্তু উত্তর দিলেও পদ পূরণ হয় না। স্যার আমাদের ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। স্যার জানান নতুন অর্গানোগ্রামের খসড়া নিয়ে তিনি ভাবছেন। চিঠির উত্তর দিবেন শীঘ্রই।জানা গেল প্রতিটি ইউনিয়ন সাবসেন্টারে ১ টি করে পদ থাকলেও কোন চিকিৎসক আদতে পদায়ন নেই।
কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন স্যার জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত এবং অফিস খুবই আন্তরিক। স্যার আমাদের কাছে এত কাগজপত্র দেখে অবাক হলেন ও প্রশংসা করলেন। স্যার বলেন এরকম চিঠির উত্তর তারা দেন কিন্তু কাজে খুব একটা আসেনা। এবারের চিঠিটা যেহেতু একটু ভিন্ন কেন্দ্রীয়ভাবে গুছিয়ে দিলে কাজটা সুন্দর করে করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।আমাদের সামনেই তিনি বিএমএ র স্যারদের ফোন করে পরদিন মিটিং ফিক্স করেন ও পরদিনই চিঠির রিপ্লাই পাঠিয়ে দেন।
চাঁদপুরে গিয়ে জানলাম এরকম চিঠি প্রায়ই আসে। খুব একটা গুরুত্ব তাই পাচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক সংকটের চিত্র ভয়াবহ এমনটা জানা গেল।
ফেনীতে জানতে পারলাম প্রতি ১-২ মাস পর পর শূণ্য পদ পূরণের জন্য চাহিদাপত্র চেয়ে চিঠির উত্তর দেওয়া হয়। কিন্তু কোনবারই সেই পদ আর পূরণ হয় না। প্রশাসন খুব উদাসীন। সবগুলো পদ পূরণের জন্য সদিচ্ছা থাকার পরও কখনও পারেননা বলে দু:খ প্রকাশ করেন ।
কক্সবাজারের অবস্থা আরো করুণ। সঠিক চিত্রটা আমরা জানতে পারিনি। রোহিঙ্গারা আসার পর অনেক নতুন সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে । এই চিঠি তাঁরা পেয়েছেন ও অতিসত্ত্বর জবাব দিবেন জানান।
লক্ষীপুরে গিয়ে জানতে পারলাম শূণ্য পদ ৮০ । উপজেলাগুলো ধুকে ধুকে চলছে। উপজেলা থেকে উত্তর আসেনি বিধায় এখনও চিঠির জবাব দিতে পারেননি।
নোয়াখালী জেলায় আমরা অনেক পরে যাই। গিয়ে জানলাম চিঠি তাঁরা পেয়েছেন ও রিপ্লাই কি দিবেন তাও ঠিক করেছেন। তবে পাঠাননি তখনও। তারা ৬ টি ইএমও পদের চাহিদা চেয়ে চিঠির জবাব দিবেন জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম এলাকার কাতারে পরে। আজীবনই চিকিৎসক সংকট থাকে। খাগড়াছড়িতে চাহিদা ২০০ এর বেশি । বর্তমানে মোট পদ ১২৮। কর্মরত ৬৯ জন। তার মধ্যে সংযুক্তিতে চলে গেসেন ৩ জন। শূণ্যপদ ৫৯। জানতে পারলাম ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতালও নাকি হচ্ছে।
বান্দরবানে চাহিদা আনুমানিক ১৫০। বর্তমানে মোট পদ আছে ১০৯। কর্মরত আছেন ৪৪ জন। সংযুক্তিতে চলে গেসেন ৮ জন। শূণ্য পদ ৬৫।
রাঙ্গামাটিতে চাহিদা আছে ২৩৯। মোট পদ ১৭৬। কর্মরত ৮৫ । সংযুক্তিতে ১৫ জন চলে গেসেন। শূণ্য আছে ৯১।
ঐদিকে সিলেটে গিয়ে খুব ভাল লাগল। সিলেটের সিভিল সার্জন অফিস পদ তৈরির ব্যাপারে তৎপর। উত্তর ইতোমধ্যেই গুছিয়ে নিয়েছেন। সিলেটে সব পর্যায়েই প্রচুর চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানান।
হবিগন্জের সিভিল সার্জন স্যার সম্প্রতি ডেঙ্গুতে ইন্তেকাল করেছেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন স্যার খুব আন্তরিক। পদ সৃজনের সাথে তিনি সম্পূর্ণ একমত।
মৌলভাবাজার জেলায় গিয়ে মনে হল এত বেশি তৎপরতা আর কোথাও চোখে পরেনি।
মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পদ সৃজন সংক্রান্ত পত্রটির প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস এ ঊত্তীর্ণ অথচ পদশূন্য না থাকায় নিয়োগ বঞ্চিত ৮৩৬০ জন চিকিৎসকের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগ করি। বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন ডা. হরিপদ রায় (অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক, স্বাস্থ্য বিভাগ, সিলেট এবং বিএমএ, শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি)। সহযোগিতা করেন মৌলভীবাজার বিএমএ সভাপতি ডা. শাব্বির হোসেন খান। সহযোগিতা করেন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পার্থ সারথি দত্ত এবং সিভিল সার্জন কার্য্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পদ সৃজনের ব্যাপারে স্যারদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতা স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাব্বির স্যারের পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারি
মন্ত্রণালয় প্রেরিত পদ সৃজন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পত্রের আলোকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জন্য কিভাবে চিকিৎসকদের পদগুলো পূনর্বিন্যস্ত করা যায়, সেটাই ছিল এই মতবিনিময়ের মূখ্য উদ্দেশ্য। আরো উল্লেখ্য, এ সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন ফোরামের আলোচনা ও প্রস্তাবনাকেও তাঁরা গুরুত্ত্ব সহকারে বিবেচনা করেন। পরবর্তীতে একটি অরগানোগ্রামের খসড়া তাঁরা তৈরি করেন।
আমাদের ৭ টি বিভাগ ঘুরে দেখা প্রাথমিকভাবে শেষ। একেক বিভাগের একেক চিত্র। সর্বশেষ আমরা যাই ঢাকায়। ওখানকার চিত্র তো পুরাই ভিন্ন! অবাক কাণ্ড!
সহযোগিতায়:
ডা আতিকুর রহমান আদনান
ডা সাদিয়া আহমেদ
[চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী:
ডা ইমরান হাসান রাব্বী
ডা আবদুল্লাহ ফয়সাল
ডা বাহাউদ্দিন কাওসার
জেলা প্রতিনিধি:
ডা নাহিদ আমির বৃষ্টি
ডা সিফাত তানজিন
ডা রায়হান মামুন
ডা মো তানভীর আকবর
ডা রিপন
ডা তানভীর চৌধুরী রেনেস
ডা জয়দিপা জবা
সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী:
ডা আতিকুর রহমান আদনান
ডা উম্মে হুমায়রা কানেতা
জেলা প্রতিনিধি:
ডা মনিকা পাল
ডা দীপিকা চক্রবর্তী
ডা আশিকুল মুহিত
ডা রায়হান আহমেদ]