একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের লাইভ টকশোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ এনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে নিজ জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ। দুই দফা মিছিল ও সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ ও তার পৈতৃক বাসভবন ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এর আগে মিছিলের সময় চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বিএনপি নেতা দুদুর পৈতৃক বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে চৌরাস্তার মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গরীব রুহানী মাসুম। আরো বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহাবুল হোসেন, যুবলীগের নেতা শেখ সেলিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পি, সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, ছাত্রলীগের নেতা অয়ন হাসান জোয়ার্দ্দার ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা শাকিল আহম্মেদ জিম, পৌর ছাত্রলীগের নেতা তানভীর আহম্মেদ সোহেল, ছাত্রলীগের নেতা সাইফুল ইসলাম রানা, টোকন, মোমিন, আকাশ, মেরাজ, রাজু, মিঠুন, তানজির, মিণ্টু, রিপন, স্বাধীন, পাভেল, রাব্বি, রিমন, রকি, সিপন, নুমান, আফরিজ, মাহাফুজ, ফিরোজ, ইমন, রামিম, রকি, সিপন, উজ্জল, মণ্টা, অভি, রাজা, সজিব, মামুন, রুবেল, ঝলক, হারুন, মুনতাজ, আলমসহ জেলা, পৌর, কলেজ ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের নেতা-কমীরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমেল মল্লিক।
এদিকে, রাত সাড়ে নয়টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাসের বাসভবনের সামনে থেকে আরেকটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিভিন্ন স্লোগানসহ শহর ঘুরে শামসুজ্জামান দুদুর বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং তাকে নিজ জেলাতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক লীগের সদস্য আব্দুল আলিম ভূলন, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হুছাইন জ্যাকি, সাবেক সদস্য গাজী ইমদাদুল হক সজল, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সদর থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা বুদো, ইমরান শেখ, সেলিম, মামুন, জেলা ছাত্রলীগের নেতা ইব্রাহিম শেখ ইমরান, শেখ শাওন, ইসতিয়াক সিথুন, আরাফাত প্লাবন, আরফিন সজীব, এলাহি তৌফিক, জাহিদ আহমেদ, রকিব, জিতু, সুরুজ, লিখন, লিজন, অঙ্কন, শেখ ফয়সাল, সালেকিন, ফয়সাল আরাফাত, রাইসুল, জেলা বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের সভাপতি কানন আহমেদ প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফসহ নেতারা।
এদিকে, বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা শামসুজ্জামান দুদুর বড় ভাই অ্যাড. মনিরুজ্জামানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাব ও ঘরের দরজা ভাঙচুর করেন। এ হামলায় মাথায় আঘাত পেয়েছেন তারিকুজ্জামান সজিবের স্ত্রী গৃহবধূ সজিফা খাতুন রত্না। তিনি বলেন, ‘ঘরের দরজা লাগিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ বাইরে অনেক মানুষের গলার আওয়াজ পাই। কিছুক্ষণের মধ্যে বারান্দায় থাকা চারটি চেয়ার, একটি টেবিল, থালা-বাসনসহ সবকিছু ভাঙচুর করে তারা। ঘরের দরজা লাগানো থাকায় তারা অনেক জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল। এ অবস্থায় দরজার সামনে যেতেই তাদের ধাক্কায় দরজার সঙ্গে আমার মাথায় আঘাত লাগে।’
এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শামসুজ্জামান দুদুর ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। তবে ছাত্রলীগের ছেলেরা সামান্য বিষয় নিয়ে আমাদের বাড়িতে দুদফা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে আর কী অভিযোগ করব, পুলিশ তো ঘটনাস্থলে ছিল। তারা কী ব্যবস্থা নেয় দেখি।’ তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর বাড়ির বারান্দায় থাকা একটি টেবিল ও তিনটি চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
গত সোমবার রাতে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের টকশোতে (রাজকাহন) অংশগ্রহণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। সেখানে তিনি আরো চার অতিথির সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বঙ্গবন্ধুর মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
মূলত ‘ছাত্রদল থেকে কাউন্সিল : বিএনপির ভাবনা কী?’ বিষয়ভিত্তিক ওই টকশোতে অন্য অতিথিদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বিএনপির আগামী দিনের কৌশলের কথা তুলে ধরে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কৌশল হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যেভাবে শেখ মুজিব বিদায় হয়েছে, শেখ হাসিনা বিদায় হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’