ইকবাল হাসান, নেত্রকোনা : বাংলাদেশ ভারত দ্বিপক্ষীয় উচ্চপর্যায়ের বার বার বৈঠক হওয়া সত্তে¡ও চালু হয়নি দু’দেশের অপার সম্ভাবনাময় নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী রামনাথপুর এলসি স্টেশন। এটি চালু হলে একদিকে যেমন স্থল ও জলপথে দু’দেশের পণ্য আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসবে। অন্যদিকে হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দু’দেশের সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্থ। রোধ করা সম্ভব হবে সীমান্তবর্তী চোরাচালান। যা পরবর্তীতে এক বিশাল বন্দরে পরিণত হবে।
নেত্রকোনার মোজাদ্দেদীয়া আমদানি রপ্তানি কারক মালিক সমিতির প্রধান মেসার্স খাজা ট্রেড লিমিটেড এর সত্বাধিকারী শাহ্ খাজা মোঃ রেজাউল হক ২০০৬ সালে দু’দেশের সীমান্তবর্তী মহিষখলা নদী পথে এল.সি স্টেশন চালুর জন্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আমদানি রপ্তানির বর্ডার হাট এর সেক্টেটারী এম.এম সাংমার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৯ আগস্ট তারিখে নেত্রকোনা বি.ডি.আর এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ নাসিমুল আলম সুমেশ্বরী শাখা নদী পথে রামনাথপুর স্থানে ল্যান্ডপোর্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তারপর সীমান্ত পিলার নং ১১৮৬Ñ৫ এস এর নিকটে বাংলাদেশ কাস্টম কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্সের উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কয়লা স্তুপিকরণের জন্য খাজা ট্রেড লিমিটেড মালিকের নামে ১.৫০ একর জমি ক্রয় করেন।
এছাড়া এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে পরবর্তীতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে মোট ২৮ একর জমি ক্রয় করেন। এল.সি স্টেশন চালুর ব্যাপারে প্রত্যেকটি আবেদনে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সংসদ সদস্য,ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,নেত্রকোনা জেলা চেম্বার অব কমার্স এবং নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার সুপারিশ করেন।
পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নেত্রকোনা জেলার সহকারী কমিশনার আনজুমান আরা আক্তার, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মোঃ হাসান মনসুর, ঢাকা সদর উত্তরা কাস্টমস কমিশনার মোঃ আল আমিন সরজমিনে রামনাথপুর পরিদর্শন করে এর পক্ষে জোরালো প্রতিবেদন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারার স্থানীয় কাস্টমস এবং বাংলাদেশ যৌথ এক সভায় এল.সি স্টেশন চালুকরণের পক্ষে জোরালো মতামত দিয়েছেন।
নেত্রকোনা সীমান্তবর্তী কলমাকান্দার রামনাথপুর আমদানি-রপ্তানিকারক (অভ্যন্তরিন) ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব জানান, রামনাথপুর বর্ডার হতে ভারতের দিকে ৭ কি:মি: পর্যন্ত পাহাড় হতে বাংলাদেশে কয়লা আমদানি করলে শতাধিক বছরেও শেষ হবে না।
এ কয়লা পাহাড়ের সন্নিকটে পাবলি, ছাড়াগাও ও পশ্চিমে বিজয়পুর শুল্ক ষ্টেশনে এখান থেকে দুর্গম এলাকায় কয়লা যাতায়াতের কোন সুযোগ নেই। পাহাড়ের কারনে বাংলাদেশে এ সীমান্ত পথে কয়লা রপ্তানির জন্য নেত্রকোনার রামনাথপুর স্থান ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে যতগুলো স্থলবন্দর আছে সেগুলোতে শুধু স্থলপথে এবং যতগুলো জলবন্দর আছে সেগুলোতে শুধ পণ্য জলপথে আমদানি রপ্তানি করা হচ্ছে।
কিন্তু রামনাথপুরে দু’দেশের সীমান্তবর্তী এলসি রোড ও তার সন্নিকটে প্রবহমান মহেষখলা নদীপথ আছে। এই এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। যাত্রী ও মালামাল যাতায়াত করার জন্য ব্রিজ কালভার্ট ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকী ৪ কিমি কাচা রাস্তা পাকাকরণ প্রক্রিয়াধীন আছে।
নিরাপত্তার জন্য রামনাথপুর সংলগ্ন বর্ডারগার্ড ক্যাম্প এবং সীমান্তের ওপারে মহেষখলায় বিএসএফ ক্যাম্প আছে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীর দাবী, দু’দেশের কাস্টমস কর্মকর্তাগণ যদি সম্মত হন তাহলে অতি দ্রæত রামনাথপুরে জল ও স্থল শুল্ক স্টেশন চালু সম্ভব হবে।
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী রামনাথপুর সংলগ্ন চৈতা গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াহাব, আব্দুল শহিদ, নজরুল ইসলাম, ওবেনমারা জানান, এ স্টেশন চালু হলে মেঘালয় রাজ্যে হতে স্বল্প খরচে কয়লা, পাথর, মৌসুমি ফল মহিষ এবং আসাম রাজ্যে হতে গরু ভেড়া সহ গবাদি পশু নেত্রকোনার রামনাথপুরে আমদানি করা যাবে। অন্যদিকে আমাদের দেশ থেকে শুটকি, পান-সুপারি, কাচামাচ, ইলিশ মাছ, কাকড়া, শামুক, শাক সবজি, এলজিশাক, নেটমশারী, ছটের ব্যাট, ইট, প্লাস্টিক ও মেলামাইন সামগ্রী এসকল চোরাই পথে মেঘালয় রাজ্যে অসাধু ব্যবসায়ীগণ চালান করে দিচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানি চালু হলে এসব পন্য ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে দু’দেশের মাঝে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্থ অর্জন করতে সক্ষম হবে।
কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনেও রামনাথপুর এলসি স্টেশনটি চালু হয়নি। তবে এটি যদিও চালু করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটি চালু করা সম্ভব হলে ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আয়ের পথ সুগম হবে।
নেত্রকোনা জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন,নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী রামনাথপুর এবং ভারত সীমান্তবর্তী মহেষখলা দু অঞ্চলের মধ্যে এলসি স্টেশন চালু হলে জল ও স্থল পথে দু’দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে করে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক উন্নয়ন ছাড়াও বেকারদের আত্মকর্মসংস্থান হবে। দু’দেশের সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্থ।