হঠাৎ করেই শেখ হাসিনা যেন অচেনা হয়ে গেছেন। অচেনা হয়ে গেছেন দলের নেতাকর্মীদের কাছে। দুর্বোধ্য হয়ে গেছেন প্রশাসনের কাছে। শেখ হাসিনা পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত নিবেন সে ব্যাপারে জানেন না অনেকেই। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজনরা পর্যন্ত জানেন না তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে! তবে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যারা পর্যবেক্ষণ করেন এবং গবেষণা করেন, তারা বলছেন যে,‘তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর হয়েছেন জনগনের স্বার্থে। তিনি জনগনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। জনগনের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের সমস্যাগুলোকে দেখছেন। সেমতেই তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটাই একজন রাষ্ট্রনায়কের বৈশিষ্ঠ্য এবং দুরদৃষ্টি। ছাত্রলীগের শীর্ষ ২ নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অচেনা শেখ হাসিনাকে আবিস্কার করতে শুরু করছে আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এদের সরিয়ে দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এখানেই শেষ নয়। এরপরেও তিনি অন্য সংগঠনগুলোর ক্যাডার সন্ত্রাসদের সম্বন্ধে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের যে শুদ্ধি অভিযান। সেই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে আরো অনেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটা দল টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় রয়েছে। কাজেই এই দলের সংগঠনের মধ্যে নানা রকম স্বার্থান্বেষী মহলের অনভিপ্রেত করা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি দলের নেতাকর্মীরা ধরাকে সরা জ্ঞান করার মনোভাব তৈরী হওয়াও অত্যন্ত স্বাভাবিক। দেশটা তাদের দখলে। যেকোন টেন্ডার, যেকোন ব্যবসা, যেকোন চাঁদাবাজি তারা করতে পারে। তারা আইনের উর্ধে এমন ধারণা তৈরীই হতে পারে। শেখ হাসিনা এই ধারণাকে ভেঙ্গে দিতে চান। ধারণাটি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যই তিনি লৌহমানবীর রুপে আবর্বিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত আজ গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন যে, দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা ঠিক করবেন দলের সভাপতি নিজেই। অর্থ্যাৎ তিনিও তার চেয়ারটি সম্বন্ধে নিশ্চিত নন। আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতারাও জানেন না, দল কোন পথে এগুবে, আগামীকাল শেখ হাসিনা কি সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, তা বিপুলভাবে জনগনের কাছে প্রশংসিত এবং আদৃত হচ্ছে। জনগন মনে করছে তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন দেশ প্রেমিক এবং রাষ্ট্রনায়ক। শুধু সংগঠন নয়, প্রশাসনের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার অবসরের সময় চলে এসেছে। তাদের আসলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে কিনা। তারা কি অবসরে চলে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে নভেম্বরে। তার কি চুক্তির নবায়ন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই। কারো জানা নেই মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের চাকরির মেয়াদ বাড়বে কিনা। কেউ জানে না, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবও কি এই চুক্তিতে নিয়োগ পাবেন কিনা, কিংবা জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হবে কিনা।
শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং যাদের এই সমস্ত কাজে স্বার্থ নেই তাদের সঙ্গে আলাপ করছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা, গত ১৮ বছর দল চালিয়ে এবং ১৫ বছর দেশ চালিয়ে দলের যেমন ভিতর বাহির সমস্ত তার মুখস্থ। দলের নেতাকর্মীদের সব বৈশিষ্ঠ্য তিনি জানেন। সরকারের ভিতরের সফলতা দুর্বলতা তার জানা। তিনি জানেন যে, এখনি যদি দলের লাগাম টেনে না ধরা যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ বা প্রশাসনের ভিতর থেকেই ‘দানব’ তৈরী হবে। যে ‘দানব’রা সব উন্নয়ন কুড়ে কুড়েই শুধু খাবে না। জনগনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড়াঁবো। সেই জন্য জনগনের কল্যানে বিশ্বাসী শেখ হাসিনা জনগনের পক্ষে একাই লড়ছেন। সেই জন্য তিনি ক্রমশ সবার কাছে অচেনা হয়ে যাচ্ছেন। এক কঠোর লৌহমানবী রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে আভিভূর্ত হচ্ছেন।