ভোটের প্রতিযোগিতায় ৬৬ বছরের বৃদ্ধা!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে আবারো সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ৬৬ বছরের বৃদ্ধা সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ছালেহা বেগম। এলাকায় তিনি শান্তির মা নামে পরিচিত। তার এই ভোটের প্রতিযোগিতায় নামায় অবাক হয়েছেন এলাকাবাসী।

রোববার জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে ছালেহা বেগমের মনোনয়নপত্রটি ‘বৈধ’ ঘোষণা হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘ট্যাকা দিয়া যেন ভোট বেচা কিনা না করেন আমি এই দোয়া করি। আমি টাকা দিয়ে ভোট কিনতাম না। আপনারাও বেচবেন না। কারো কাছে ভোট চাইতাম না, আল্লাহর যদি দয়া হয় আর মানুষ যদি আমারে ঈমানের সহিত ভোট দেয় তাহলে আমি আবারো পাশ করুম।’

ছালেহা বেগমের শরীরে আগের মতো জোর নেই। কিন্তু মনের জোর এখনো অটুট আছে। আর সেই জোর থেকেই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে অংশ নিতে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একাই এসেছেন তিনি। এই বয়সে প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেগে যান তিনি। বলেন, ‘বয়স কোনো ব্যাপার না। ইউপি সদস্য থাকার সময় এলাকায় অনেক কাজ করেছি। প্রার্থী হওয়ার জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। মানুষের সমর্থন নিয়ে যদি নির্বাচিত হই তাহলে আবারো এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।’

লোকমুখে শোনা যায় তিনি কিছুটা মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ, কিন্তু উনার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে এখন নির্বাচনী মাঠে নানা ধরনের আলোচনা চলছে।

ছালেহা বেগম নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আলীয়াবাদ গ্রামের মৃত মিদন মিয়ার স্ত্রী। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী এই ছালেহা বেগম ১৯৯৭ সালে একবার উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর তিনি নারী কাউন্সিলর হিসেবে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি সরকারি বেতন-ভাতাও নেননি। জমা দিয়েছেন সরকারি কোষাগারে।

এবারো তিনি নবীনগর পৌরসভা নির্বাচনে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।

ছালেহা বেগমের তিন ছেলের একজন প্রবাসে থাকলেও বড় দুই ছেলে বাড়িতেই কৃষিকাজ করেন। আর একমাত্র মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। আলীয়াবাদ গ্রামের কালা ফকিরের মেয়ে হচ্ছেন ছালেহা বেগম, কালা ফকির ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রোববার বাছাই শেষে ওই বৃদ্ধার মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন তিনি নির্বাচনের একজন বৈধ প্রার্থী।’

উল্লেখ্য, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নবীনগর পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপরই ২৩ সেপ্টেম্বর বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। আর আগামী ১৪ অক্টোবর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top