বাংলাদেশের ‘সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এমনটাই বলছে টাইমস হায়ার এডুকেশন, যে প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবী জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং নির্ধারণ করে।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ যে ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে সেটি নিয়ে অনেকে ইতোমধ্যে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ টাকা ঠিকমতো খরচ হচ্ছে না।
“আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব নেই, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ১০ কোটি টাকা। কিন্তু আমি সেটি বাড়িয়ে ৬০ কোটির টাকার বেশি করেছি। কিন্তু আমি খুব দু:খের সাথে লক্ষ্য করেছি এই অর্থটা সঠিকভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয় হয় না।”
অধ্যাপক মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করা হয় না এবং সেটি করার প্রয়োজনও বোধ করে না।
“এটা না করলে শিক্ষা বিশ্বমানের হওয়ার কথা তো বাদই দিলাম, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা খুব বেশি দূরে যেতে পারবো না,” বলছিলেন অধ্যাপক মান্নান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ বলতে অনেকগুলো সূচক থাকে। যেমন: শ্রেণীকক্ষের আকার, শ্রেণীকক্ষের ধরণ, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস ইত্যাদি বিষয়।
তিনি বলেন, এসব মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে আছে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ”টিচিং কোয়ালিটি” নিম্নগামী হবে না, বরং উর্ধ্বমুখী হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা এখন বিশ্বের সেরা-সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি আনছেন। সেজন্য টিচিং কোয়ালিটি নিম্নগামী হবার বিষয়টির সাথে একমত হবার কারণ নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় যোগ্য ব্যক্তিরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে কিনা সেটি নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক এবং পারিবারিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন “দেখা যায়, কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোন একজন ব্যক্তিকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য যোগ্যতার নির্দিষ্ট মান কমিয়ে দিয়েছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য একটি বিষয়।”
শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেবার অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান এ ধরণের অভিযোগ মানতে নারাজ।
তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষক নিয়োগে সম্প্রতি একেবারেই অভিযোগ নেই। সুষ্ঠুভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। “
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান মনে করেন, এটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে বাংলাদেশে সার্বিক শিক্ষার মান এই অঞ্চলে অন্য দেশগুলোর তুলনায় যে ভালো অবস্থায় আছে একথা বলা যাবে না।
লন্ডন-ভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২০ সালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে র্যাংকিং করেছে সেখানে দেখা গেছে গত চার বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্রমাগত অবনতির দিকেই যাচ্ছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং-এর (শিক্ষার পরিবেশ) ক্ষেত্রে ২১.৭ স্কোর করেছিল।
কিন্তু ২০১৮ সালে সে স্কোর কমে হয়েছে ২০.৪। এবার সেটির সবচেয়ে বড় অবনতি হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং-এর ক্ষেত্রে ১৬ স্কোর করেছে। সৌজন্যে- বিবিসি বাংলা