ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। ১৭.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে ২৬ বলে ৫২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন আফিফ হোসাইন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে রায়ান বুর্লের (৫৭) ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজার (৩৪) রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ১৮ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা।
শুক্রবার সারাদিনই ছিল বৃষ্টিময়। মিরপুর শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি এবং মাঠ ভেজার ফাঁদে টস হতে দেরি হয়। যার ফলে খেলা শুরু হয় রাত ৮ টায়। যেহেতু অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। তাই ম্যাচের পরিধিও ছোট হয়ে যায়। খেলা নির্ধারণ করা হয় ১৮ ওভার করে।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই টাইগার বোলারদের তোপে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন। ৯.৩ ওভারে ৬৩ রান তুলতেই জিম্বাবুয়ে হারায় গুরুত্বপূর্ণ ৫ উইকেট।
বল হাতে প্রথম ওভারে আক্রমণে আসেন অধিনায়ক সাকিব নিজেই। প্রথম ওভার ৬ রান দিয়ে শেষ করেন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। দুর্দান্ত ডেলিভারিতে জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রেন্ডন টেলরকে ব্যক্তিগত ৭ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তাইজুল। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়া ১৫তম বোলার তিনি।
তাইজুলের আঘাতের পর ৩৪ রানের ইনিংস খেলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মাসাকাদজা। কিন্তু সাইফউদ্দিনের বলে সাব্বির রহমানের অসাধারণ এক ক্যাচ হয়ে বিদায় নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।
এর আগে ক্রেইগ আরভিনকে মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। এরপর উইলিয়ামসকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে উইকেট তুলে নেন মোসাদ্দেক। পরের ওভারে মোস্তাফিজের ওভারে রান আউট হন মারুমা। ৫১ থেকে ৬৩ অর্থাৎ ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে টেনে তোলেন রায়ান বুর্ল ও মুতোম্বুজি। বুর্ল তো রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন। বিশেষ করে সাকিবের ওভারে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে নিয়েছেন তিনি। ৩ চার ও ৩ ছক্কার সহায়তায় মাত্র ২৮ বলেই তিনি তুলে নেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত বুর্ল ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন। মুতোম্বোজি অপরাজিত থাকেন ২৭ রানে।
রায়ান বুর্লের হাতে রীতিমতো ধোলায় খেয়েছেন টাইগার কাপ্তান সাকিব আল হাসান। এক ওভারে যথাক্রমে ৬.৪.৪.৬.৪.৬- ৩০ রান দিয়েছেন সাকিব। যার সবকটি বাউন্ডারি আসে বুর্লের ব্যাট থেকে। ইনিংসের ১৬তম এবং নিজের শেষ ওভারে এই রান দেন সাকিব। ম্যাচে সাকিবের ৪ ওভার থেকে জিম্বাবুয়ে পায় ৪৯ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দীন।
জিম্বাবুয়ের ছুড়ে দেওয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে বিপাকে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। দলীয় ২৬ রানেই চাতারার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন লিটন (১৯)। আর চতুর্থ ওভারে বিদায় নেন সৌম্য সরকার (৪)। এরপর জার্ভিসের করা ওই ওভারে অসাধারণ বাউন্সে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন মুশফিকও। এরপর সাকিবকে বিদায় করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন চাতারা। ২৯ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর ৫৭ রানের মাথায় মাহমুদুল্লাহ ও ৬০ রানের মাথায় সাব্বির রহমানকে হারালে অনেকটাই ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু সেখান থেকে আফিফ হোসেন ধ্রুবর সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস এক জয় এনে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। মাত্র ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন ৩ উইকেটের ব্যবধানে। ২৬ বলে ৫২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন আফিফ হোসাইন।
জিম্বাবুয়ে বোলারদের মধ্যে কাইলি জার্ভিস, চাতারা, মাদজিবা ২টি করে এবং বুর্ল একটি উইকেট শিকার করেন।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আফিফ হোসাইন।