মেয়াদ পূর্ণ করার প্রায় ১০ মাস আগেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার দুর্নীতি, অযোগ্যতা, বিতর্কিত ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতার একের পর এক নেতিবাচক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। পাশাপাশি অযোগ্যতা ও আলসেয়ামিতেও সংগঠনে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে সংগঠনটিতে। বিভিন্ন সময় অপরাধের ঘটনায় সংগঠনকে তারা তামাশার পাত্রে পরিণত করেছেন বলে দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।
যৌথসভায় উপস্থিত সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, রংপুর-৩-এর উপ-নির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে আয়োজিত এ বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ তোলেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। বিশেষ করে তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না। এ সময় মনোনয়ন বোর্ডের অন্য সদস্যরাও আলোচনায় অংশ নেন।
অভিযোগের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সকাল ১১টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুষ্ঠানে যাওয়া এবং সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকে প্রধান অতিথি করে আয়োজন করা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে একই ধরনের অপর একটি ঘটনার কথা এ সময় উঠে আসে।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি দিতে না পারা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করার বিষয়ে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ আসা, কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক বিতর্কিত, বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করার বিষয়ে এ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
একইসঙ্গে বাদ পাড়াদের সংখ্যা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও তারা কারা সেটা স্পষ্ট না করা ও পরে বাদ দেওয়ার ঘোষণা কার্যকর না করা, পাশাপাশি অনেক ত্যাগীকে বাদ দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় কমিটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বাদ পড়াদের অনশনের কথাও তোলেন দু’জন নেতা।
এছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধুর ক্যান্টিনে মাঝে-মধ্যেই অনুপস্থিত থাকা, ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে বিবাহিত হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলেন নেতারা। এছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দু’জনের বিরুদ্ধেই অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ নিয়েও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কানাঘুষা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি পার্টি অফিসের তিন তলায় গিয়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের মাদকদ্রব্য গ্রহণ করার ছবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে গেলে ছাত্রলীগকে পার্টি অফিসে আসতে নিষেধ তরে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ এ সভায় কেবল দশ-পনের মিনিট ধরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এ সভায় আলোচনা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন।
সভা সূত্রে আরো জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সভা চলাকালীন গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করলে আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আব্দুর রহমান তাদেরকে দেখা না করার পরামর্শ দেন। এরপরও তারা গণভবন ত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের গণভবন থেকে চলে যেতে বলেন। এরপর তারা গণভবন ত্যাগ করেন।
গত ১৩ মে সম্মেলনের এক বছরের মাথায় ৩০১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সংগঠনটির ভেতর থেকেই নানা সমালোচনা চলছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ১২ ও ১৩ মে সম্মেলনে কমিটি করতে ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগ। পরে একই বছরের ৩১ জুলাই সম্মেলনের দুই মাস পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্বিদ্যালয় ও দুই মহানগরের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।