ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে শুধু সুবিধাই নিয়েছে : খালেকুজ্জামান

বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেছেন বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার যে, ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে বাংলাদেশের কাছ থেকে শুধু সুবিধাই নিয়েছে, বাংলাদেশকে তিস্তার পানিসহ কিছুই দেয়নি। ফলে ভারতের আশ্বাসে বিশ্বাস করার কিছু নেই।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাসদের উদ্যোগে সমাবেশে তিনি একথা বলেন, কাশ্মিরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে, আসামের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) করে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে সমাবেশে ঢাকা মহানগর বাসদ এর আহ্বায়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য নিখিল দাস ও জুলফিকার আলী। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে খালেকুজ্জামান বলেন, উন্নয়নের ডামাডোল বাজতে থাকা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিজনিত সংকটের মাঝেই চারিদিক থেকে বাহ্যিক বহুমাত্রিক সংকট ক্রমাগত চেপে আসছে। মিয়ানমার ১০/১১ লাখ রোহিঙ্গা ঠেলে দিয়েছে, ভারত আসাম থেকে কখনো ৪০ লাখ, কখনো ২০ লাখ আসাম নিবাসীকে বাংলাদেশী বলে বাংলাদেশে পাঠাতে চাইছে, চারিদিকে কাঁটাতার, ন্যায্য পানির হিস্যা বঞ্চনা, সাগরের তেল-গ্যাস লুণ্ঠনের নতুন মহড়া ইত্যাদি মিলে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, কূটনীতি ও পদক্ষেপসমূহের দৈন্যতা ও ব্যর্থতার খেশারত বহু মূল্যে দেশবাসীকে দিতে হবে। যা কাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত ছিল না।

ভারতের নাগরিক তালিকা প্রসঙ্গে খালেকুজ্জামান আরো বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে ক্রমাগত স্পষ্ট করে তুলছে, পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারই অংশ হিসেবে আসামের নাগরিক তালিকা তৈরির উদ্যোগ। এতদিন প্রচার করেছে ৪০ লক্ষাধিক বাংগালী মুসলমান বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসামে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে নাগরিক তালিকা করে তাদের ফেরৎ পাঠাবে। এ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আসামে দীর্ঘদিনের ‘আলী, কুলি, বঙ্গাল খেদাও’ (মুসলিম, বিহারী ও হিন্দু বাঙ্গালী) শ্লোগানে সংগঠিত হলেও বিজেপি সরকার তাকে নতুন সংকটের আবর্তে নিক্ষেপ করছে।

খালেকুজ্জামান বলেন, আসামের এনআরসি-তে যারা বাদ পড়েছেন তারা যদি আগামী দিনেও ফরেনার্স ট্রাইবুনাল ও হাইকোর্ট-সুপ্রীম কোর্টে অযাচিত হয়রানির পরও প্রমাণ করতে না পারে তাহলে তাদের কি হবে? তাছাড়া যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র জনসাধারণ। বলা হয়েছে এফটি এবং আদালত করতে প্রতি জনের প্রথমে ২০ হাজার পরে ১৯ হাজার রুপি লাগবে। ফলে অসহায় জনগণ এমনিতে নিঃস্ব-তারা আরো নিঃস্বতর হবে। তা ছাড়া তালিকায় নাম না ওঠাদের এখনই নানা হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে নেয়া হচ্ছে। ফলে ভীত হয়ে অনেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। যেমনি মায়ানমারের সেনা বাহিনীর অত্যাচারে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।

খালেকুজ্জামান ভারতীয় শাসক গোষ্ঠীর এধরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশের সকল বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অপরদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে খালেকুজ্জামান বলেন, নিকট পার্শবর্তী দেশ হিসাবে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং তার প্রভাব পরিণতিতে বাংলাদেশে সংকট সৃষ্টি বিষয়ে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির আগাগোড়া মনোযোগ না দেয়া এবং সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও প্রতিকার মূলক আগাম প্রস্তুতি না রেখে তাৎক্ষণিক ও এডহক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সংকটের মাত্রা ও বোঝা দিন দিন বেড়ে চলছে।

খালেকুজ্জামান কাশ্মির সমস্যা প্রসঙ্গে বলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫(ক) বাতিলেল এর মাধ্যমে ভারত সরকার কাশ্মিরের জনগণকে দেয়া বিশেষ অধিকার খর্ব করে বাস্তবে কাশ্মিরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের আন্দোলনে শেষ পেরেক ঠুকলো।

Share this post

scroll to top