গত বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয় ১ নভেম্বর। শেষ হয় ১৫ নভেম্বর। ফল প্রকাশিত হয় ২৪ ডিসেম্বর। মাত্র ১ মাস ৯ দিনের মাথায় ফল প্রকাশিত হয়।
পরীক্ষকদের অনেকে জানিয়েছেন এত কম সময়ে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন সম্ভব নয়। ফলে অনেক পরীক্ষক ভালো মন্দ সবাইকে গড়ে নম্বর দিয়ে দ্রুত খাতা দেখার কাজ শেষ করেন। এতে বঞ্চিত হয় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার চেয়েও কম সময়ে প্রকাশ কর হয় গত বছরের সমাপনী পরীক্ষার ফল।
গত বছর সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় ১৮ নভেম্বর। শেষ হয় ২৬ নভেম্বর। ফল প্রকাশিত হয় ২৪ ডিসেম্বর। মাত্র ২৮ দিনের মাথায় ফল প্রকাশিত হয়। একে অনেকে অবিশ্বাস্য দ্রুত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এত দ্রুত সময়ে ফল প্রকাশিত হলে পরীক্ষকের খাতা দেখা থেকে টেবুলেশন সর্বস্তরে খুবই তাড়াহুড়া করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। আর এর খেসারত দিচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র নম্বর গণনার ভুলের কারণে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় কয়েক হাজার করে শিক্ষার্থীর ফল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ এইচএসসি পরীক্ষায় পুনখাতা মূল্যায়নের আবেদনে ব্যাপক ফলাফল পরিবর্তনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খাতা মূল্যায়ন নিয়ে। একই সাথে প্রশ্ন উঠেছে এত দ্রুত ফলাফল ঘোষণা নিয়েও।
পূর্বে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতো তিন মাসে। গত কয়েক বছর থেকে এ দুই পাবলিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হচ্ছে দুই মাসের মাথায়। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিদ্যমান চারটি পাবলিক পরীক্ষার মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পাবলিক পরীক্ষায়ও পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক পরীক্ষক। অপর দিকে পরীক্ষার ফল ঘোষণার সময় এক মাস কমিয়ে আনায় এ ক্ষেত্রেও খাতা দেখা থেকে শুরু করে ফলাফল তৈরির প্রায় সর্বস্তরেই থাকে তাড়া। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
অনেকে বলেছেন, দ্রুত ফলাফল প্রকাশ ভালো কিন্তু তাতে যদি শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শিক্ষার মানে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেটা মানা যায় না।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১ এপ্রিল। শেষ হয় ১২ এপ্রিল। ১২ মে থেকে ২১ মে চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ১৭ জুলাই। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিন হিসাব করলে দুই মাস ৫ দিনের মাথায় ফল প্রকাশিত হয়েছে। অপর দিকে ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন হিসাব করলে দুই মাসেরও কম সময়ে ফল প্রকাশিত হয়েছে।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা। আর ফল প্রকাশিত হয় ৬ মে।
রাজধানীর জেএসসির একজন পরীক্ষক জানান, একজন পরীক্ষককে সর্বোচ্চ ৩ শ’ খাতা দেয়া হয়। খাতা গ্রহণের পর প্রথম ১০ দিনে মধ্যে ১ শ’ খাতা জমা দিতে হয়। এরপর বাকি খাতা জমা দেয়ার জন্য ১৫ দিন সময় পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এসএসসির চেয়েও জেএসসির খাতা দেখা জটিল। কিন্তু জেএসসির খাতা দেখার পারিশ্রমিক কম।
কিশোরগঞ্জ ভৈরবের মাধ্যমিক স্কুলের একজন গণিতের পরীক্ষক বলেন, তিনি এ বছর খাতা দেখেননি। তবে এর আগে যতবার খাতা দেখেছেন প্রতি বার ৪ শ’ করে খাতা পেয়েছেন। কেউ কেউ আরো বেশিও পায়।
তিনি বলেন, চার শ’ খাতার জন্য মাত্র ১৫ দিনের মতো সময় দেয়া হয় তাদের। এটা মোটেই যথেষ্ট নয়। তিনি অভিযোগ করেন সময় স্বল্পতার কারণে অনেক পরীক্ষক অনেক প্রশ্নের প্রথম কয়েক লাইন আর শেষ কয়েক লাইন পড়ে নম্বর দেয়। অনেকে খাতা দেখার ক্ষেত্রে আরো চরম অবহেলা করে বলে জানান এ শিক্ষক। বিশেষ করে জেএসসির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এ অবহেলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বরিশাল বোর্ডের এসএসসির একজন পরীক্ষক জানান, আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ খাতা পেলে প্রথম ১০ দিনে অর্ধেক জমা দিতে হয়। পরের সাত থেকে ১০ দিনে বাকি অর্ধেক দিতে হয়।
অনেক শিক্ষক তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সাধারণত এক বছর আগে খাতা দেখার বিল পাওয়া যায় না। এ বছর খাতা দেখলে পরের বছর পরীক্ষার সময় বিল পাওয়া যায়। এ কারণেও অনেকের খাতা দেখার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।
আবার কোনো কোনো পরীক্ষক বলেছেন যারা সৎ আন্তরিক তারা কম সময়েও চেষ্টা করেন সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের। আবার কিছু কিছু শিক্ষক রয়েছে যারা আরো বেশি সময় পেলেও আন্তরিকতার সাথে খাতা দেখবে না। এ সমস্যা এড়াতে খাতা পুনর্মূল্যায়নে ভুল ভ্রান্তি পেলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার বলে মত দেন তারা।