আসামী আটক করেছে র‌্যাব, ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার চরফতে বাহাদুরপুর গ্রামের মহসিন মাতুব্বর নামে এক যুবককে শ্বাসরোধ করে হত্যা অভিযোগে মামলা হলেও পুলিশ দোষিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। র‌্যাব মামলার এক আসামীকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশ সেই আসামী ছেড়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। উল্টো মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা চেষ্টা করা হয়েছে বলে স্বজনদের দাবী।

সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে,মহসিন মাতুব্বর  মাদারীপুরের কালকিনিতে এক আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অসুস্থ হয়েছে এমন দাবী করে নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সে অনুযায়ী প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়। দীর্ঘদিন পরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে মৃতের পরিবার গত ১৯ জুলাই কালকিনি থানায় ৮জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে পুলিশ এখনই এই ঘটনাকে হত্যাকান্ড মানতে রাজি নয়। পুলিশের দাবী ময়নাতদন্ত প্রদিবেদনে ভূল রয়েছে। মামলার বাদী বা বিবাদীর বদলে খোদ পুলিশই উদ্যোগী হয়ে আদালতে পুনঃময়নাতদন্তের আবেদন করে। পরে আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে পুনঃময়না তদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

মৃতের বাবা আবদুল করিম মাতুব্বর জানান, আমি প্রথমে ময়নাতদন্ত করতেই চাইনি। পুলিশই ময়না তদন্ত করিয়েছে। ময়নাতদন্তে হত্যার প্রমাণ পাওয়ার পরই আমি মামলা করেছি। অনেক দিন ধরে প্রতিবেশী দুদু মিয়া মাতুব্বরের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে। এর জের ধরে দুদু মিয়ার নির্দেশে অপর আসামিরা আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বিদ্যুৎস্পর্শে পড়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মৃতের মা মুন্নি বেগম বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। র‌্যাব এক আসামীকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশ সেই আসামী ছেড়ে দিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালকিনি থানার ওসি (তদন্ত) হারুন-অর রশিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। র‌্যাব আসামী ধরলেও পুলিশের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন তদন্ত কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া অন্য কারো আসামী ধরার অনুমতি নেই। মৃতের শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে। তবে সেটা হত্যার উদ্দেশ্যে করা আঘাত নয়। বিদ্যুৎস্পর্শে পড়ার পর তাকে বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গ্রামের লোকজন কিল-ঘুষি মেরেছে। নতুন করে ময়নাতদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শ্বাসরোধের তার মৃত্যু হয়েছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমান হলেই আসামী গ্রেপ্তার করা হবে। তবে মাদারীপুর জজকোর্টের আইনজীবী ও এপিপি এডভোকেট আবুল হাসান সোহেল বলেন, হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার পরই আসামী গ্রেপ্তারের আইন রয়েছে।

Share this post

scroll to top