স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহ বিভাগের তৃতীয় বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক দাবী ও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম স্বাক্ষরিত স্বারকলিপি প্রদান এবং নতুন বিভাগীয় কমিশনারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট এএইচ এম খালেকুজ্জামান, অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা রানু, ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেন, অধ্যাপিকা লিলা রায়, কাজী আজাদ জাহন শামীম, অ্যাডভোকেট শিব্বির আহাম্মেদ লিটন, অ্যাডভোকেট হাবিবুজ্জামান খুররম, শহীদুর রহমান শহীদ, সাংবদিক মো. নজরুল ইসলাম, শংকর সাহা, রেকেয়া আফসারি শিখা, খন্দকার সুলতান আহমেদ, নাদিরা সুলতানা হ্যাপী, মমতাজ বেগম শুভা, জহুরা খানম, শামীমা নাসরিন, নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার পিছনে জেলা নাগরিক আন্দোলনের বিশেষ অবদান রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের যাত্রা প্রায় চার বছর অতিক্রম করেছে। কিন্তু কয়েকটি বিভাগীয় অফিস প্রতিষ্ঠা ছাড়া চার বছরে আমরা উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছিনা। বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহনের জটিলতা এখনও নিরসন হয়নি। এ সমস্যার আশু সমাধান প্রয়োজন।
ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়নে বিভিন্ন জনদাবীসমুহ বাস্তবায়নের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিম্ন লিখিত দাবি সমূহ হচ্ছে-
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদ-নদী আমাদের সম্পদ। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরটি বিখ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। কিন্তু বিখ্যাত এই নদটি দীর্ঘকাল পূর্বেই এর নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য আমারা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি। অবশেষে সদাশয় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উভয় তীরের ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করে এর ড্রেজিং এর কাজ যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এবং যথাযতভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হবে এটি আমাদের প্রত্যাশা। এ বিষয়ে আমরা আপনার যথোপযুক্ত হস্তক্ষেপ কামনা করি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য। ফুটপাতসহ রাস্তার একাংশ অবৈধ দখলে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফুটপাত ও রাস্তা অবৈধ দলখমুক্ত করতে হবে। যানজট নিরসনে যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও বিভাগীয় শহরের প্রধান প্রধান রাস্তাগুলো ৪ লেনে উন্নীতসহ শহরের সকল রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে শেরপুর জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারী ইউনিট চালু করতে হবে।ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে বিভাগের সকল জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও টেক্সটাইল কলেজ স্থাপন করতে হবে। ময়মনসিংহে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগের সকল জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতি জেলায় আধুনিক সময়োপযোগী পর্যটন কেন্দ্র ও হোটেল স্থাপন করে বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারনসহ দর্শনীয় স্থান সমূহে যাতায়াত পর্যটন বান্ধব করে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ-জামালপুর-তারাকান্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু যমুনাসেতু পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন স্থাপন করে প্রতি ঘন্টায় যাত্রী বান্ধব ট্রেন চালু করতে হবে। বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন জামালপুর পর্যন্ত সংযোগ করে ট্রেনের কামরার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। আরো দুটি নতুন ট্রেন চালু করতে হবে। ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী বন্ধ করতে হবে। হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী ও ধানুয়া কামালপুর ইমিগ্রেশন সহ পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল স্থল বন্দর নির্মাণ করতে হবেময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের মধ্যদিয়ে চলমান রেল লাইনটি শহরে যানযটের প্রধান কারন। ময়মনসিংহ রেলষ্টেশনসহ শহরের বুকচিরে চলমান রেললাইনটি স্থানান্তর করতে হবে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরসহ সকল জেলা শহরের অভ্যন্তরীন সড়ক সমূহ প্রশস্থ করে বিভাগীয় শহরের সাথে জেলা শহরের মহাসড়ক সমূহ চারলেনে উন্নীত করতে হবে। বিভাগীয় শহরে জনবহুল গুরত্বপূর্ণ মোড়ে ফুট ওভারব্রীজ ও ফ্লাইওভার নির্মাণ জরুরী। ময়মনসিংহ বিভাগে অর্থনৈতিক জোন, সকল জেলা শহরে আধুনিক ডিজিটাল শিল্প অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের উপর কমপক্ষে আরও তিনটি সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরী। ময়মনসিংহে আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ ঐতিহাসিক সূর্যকান্ত হাসপাতাল (এস.কে)’কে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ডিজিটাল মা ও শিশু হাসপাতালে রূপান্তরের জোড় দাবী জানাচ্ছি।
বিভাগের প্রতিটি জেলায় জেলা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করতে হবে। বিভাগীয় শহরসহ বিভাগের প্রতি জেলা শহরে আধুনিক শিশুপার্ক ও চিড়িয়া খানা নির্মাণ করতে হবে। বিভাগীয় সদরে ডাক ও জীবন বীমা ডিভিশনাল কার্যালয় স্থাপন করতে হবে। ময়মনসিংহ শহরের প্রাণ কেন্দ্র থেকে পতিতালয়টি স্থানান্তরসহ পতিতালয়ের ভিতরে অবৈধ মদের দোকান/ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। ময়মনসিংহ শহরে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্জ স্থাপন, ময়মনসিংহ মেট্রোপলিটন আদালত স্থাপন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শ্রম আদালত, ময়মনসিংহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন থেকে জেলা জজ আদালত ভবন পর্যন্ত চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফ্লাইওভার ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের রফিক উদ্দিন ভূইয়া ষ্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে হবে।
রাস্তা-ঘাট, বিল্ডিংসহ সকল নির্মাণ কাজ মানসম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি অথবা খাম খেয়ালী করে নকশা ও পরিকল্পনা নির্মাণ করলে যখন তা দৃশ্যমান হবে তখনি সংশ্লিষ্টদের সাজা নিশ্চিত করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ দূষন, খাদ্যে ভেজাল, বিষ মিশ্রণ, ঔষধে ভেজাল, খাল-বিল-নদী-পুকুর দখল মুক্তকরণসহ, প্রাইভেট হাসপাতাল, ফার্মেসী ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ, রিএজেন্ট, অস্বাস্থ্যকর অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক, সরকারী হাসপাতালে ও আদালত এলাকায় দালাল কিছু ব্যবসায়ী একদর নামক ফর্মুলায় মুনাফার জুলুম, ইচ্ছেমত বেশী দামে পন্য বিক্রয় ও মজুতদারী পন্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা সমস্যার সমাধানে নিয়মিত কার্যকর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপন করতে হবে। ময়মনসিংহের বিশ্বখ্যাত পাট এর ঐতিহ্য ও গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে জাতীয়ভাবে মহা পরিকল্পনা উত্থাপন করতে হবে।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ময়মনসিংহ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস সহ বিভিন্ন সাব রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিসে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এবং এরা দলিল ও ভূমি নাম খারিজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট হইতে মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ টাকা আদায় করে। সিন্ডিকেটকে তাদের চাহিদা মত টাকা না দিলে দলিল রেজিস্ট্রি বা নামজারি কোনটাই হয় না। আমরা এই সকল সিন্ডিকেট কর্মকান্ডের অবসান চাই।
ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর স্থাপনসহ ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ‘ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা জরুরী।
ইদানিংকালে এডিস মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গুজ্বরের বিস্তার লাভ করেছে, জনগণ আতঙ্কিত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসনিক পর্যায়ে যথাযথ পদক্ষেপ অতিব জরুরী।
উল্লিখিত দাবী সমূহ বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নাগরিকদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি আহবান জানান।