ইংল্যান্ড ক্রিকেটে তিনি এখন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তার কাঁধে ভর করেই প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে ইংরেজরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলতি অ্যাসেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে কার্যত একাই এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক জয়। তিনি বেন স্টোকস। ‘বখাটে ও উচ্ছৃঙ্খল’ ক্রিকেটারের অপবাদ কাটিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে ফিরে পেয়েছেন তারকা এই অল-রাউন্ডারটি। দলের প্রতি দায়বদ্ধতার মূল্যায়ণ করেই হারানো সহ-অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্টোকস। সে জন্য ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কাছে ইতিমধ্যে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
২০১৭ সালে ব্রিস্টলে নাইট ক্লাবে মারামারির পর ইংল্যান্ড দলের সহ-অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বেন স্টোকসের কাছ থেকে। দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে ফেরার পর অনেক বদলে গিয়েছেন তিনি। নিজেকে নতুন ভাবে প্রমাণ করেই সহ-অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্টোকস। খেলার পাশাপাশি দলের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্যই পুরনো পদে ফিরতে চাইছেন তিনি। বিবিসি রেডিও’তে এক অনুষ্ঠানে তেমনটাই জানিয়েছেন ইসিবি’র ডিরেক্টর তথা সাবেক ক্রিকেটার অ্যাশলে জাইলস।
তিনি বলেন, ‘দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্টোকস। আমরা ওর কাছ থেকে এটাই আশা করছিলাম। ইংল্যান্ড দলের কাছে স্টোকস এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। তাই ওর একটা আবেদন নিয়ে আমাদের এখন ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে। আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই স্টোকস আমাদের বলে আসছে যে, সহ-অধিনায়কের পদটা সে আবার ফিরে পেতে চায়। ওর আন্তরিক ইচ্ছা দেখে মনে হচ্ছে, পদমর্যাদার যথার্থ মূল্য সে বুঝতে শিখেছে। পদটার জন্য ও মরিয়া। মাঠে সে সেরা যোদ্ধাদের একজন। গত কয়েক মাসে একাধিকবার তার প্রমাণ রেখেছে স্টোকস। একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে, আরেকবার গত সপ্তাহের হেডিংলে টেস্টে। আমার মনে হয়, নতুন করে ওকে ডেপুটির পদে ফেরালে তা ভুল সিদ্ধান্ত হবে না।’
এদিকে, জীবনে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন বেন স্টোকস। কখনো নাইট ক্লাবে মারপিট, কখনো প্রতিবন্ধী কিশোরকে স্ন্যাপচ্যাটে বিদ্রুপ, মদ্যপান করে রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া। বখাটে ছেলের অপবাদ মুছে কিভাবে ইংল্যান্ড দলের নতুন কাণ্ডারী হয়ে উঠলেন তিনি? নিজেকে নতুন ভাবে গুছিয়ে তোলার যাবতীয় কৃতিত্ব স্ত্রী ক্লেয়ারকেই দিচ্ছেন স্টোকস। ২০১০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে একটি ম্যাচের ফাঁকে দু’জনের দেখা। তার কিছুক্ষণের মধ্যে স্টোকসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছিল ক্লেয়ারের। স্টোকসের জার্সিতে লেখা নাম দেখেই সার্চ করেছিলেন তিনি। তবে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়েছে দুঃসময়ে।
স্টোকসের কথায়, ‘ক্লেয়ার আমার প্রিয় বন্ধু। জীবনের প্রতিটি চড়াই-উতরাইয়ে সে আমার পাশে থেকেছে, বুঝিয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে। পরিবারের অন্যরাও পাশে ছিলেন। তবে ক্লেয়ারের অবদান সবার চেয়ে বেশি। ও যতক্ষণ আমার পাশে থাকবে, ততক্ষণই আমি ভালো থাকব। ক্রিকেট আর ক্লেয়ার আমার জীবন। ওর কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, তা কোনো দিন ভুলব না। আমার কাছে এর থেকে বড় কিছু নেই। ক্লেয়ার আর সন্তানদের খুব মিস করি বিদেশ সফরের সময়।’