স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী ২০১৯ পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং পরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব কামরুল ইসলাম, মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন, অনুষদীয় ডিন, বিভাগীয় প্রধান, হলের প্রভোস্টগণ, প্রক্টর, শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা পরিষদসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে কবির জীবন ও কর্মের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার শুরুতে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য শহীদবৃন্দ, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহত এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো এতো গান রচনা করেছেন বিশ্বে এমন আর কোন কবি আছে বলে আমার জানা নেই। কবি নজরুল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন কিন্তু তার লেখাকে কখনও অনুসরণ করেননি। কবি নজরুল ছিলেন একজন স্বতন্ত্র কবি। আমি কবি নজরুলের লেখা যতই পড়ি ততোই তাঁর প্রেমে পড়ি। আমার মহান প্রতিষ্ঠান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ হতে কবি নজরুলের বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে ভারত থেকে এনে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়ায় মাননীয় উপাচার্য বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
স্মারক বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ও ভারতের বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব কামরুল ইসলাম। তিনি তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘মহাপুরুষগণ যেখানে গেছেন বা অবস্থান করেছেন, সেখানেই আলোকিত হয়েছে। কবি নজরুলের আগমনের কারণে ত্রিশাল আলোকিত হয়েছে। ত্রিশাল কবি নজরুলের তীর্থ কেন্দ্র হতে পারে। ত্রিশাল বিশ্ব তীর্থের মতো আন্তর্জাতিকভাবেও তীর্থ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠুক এই কামনা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কবি নজরুলের প্রতিটি লেখায় জেগে উঠার আহŸান রয়েছে। তিনি বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কবির লেখাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তাঁর লেখাগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’
আলোচক হিসেবে মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. সাহাবউদ্দিন, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, সঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. রশিদুন্ নবী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. আহমেদুল বারী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি জনাব মো. শফিকুল ইসলাম এবং কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি জনাব মো. মোকারেরম হোসেন মাসুম আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
আলোচনা সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ বৃত্তি প্রদান করা হয়। ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) নিয়মিত শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারকারী ১৩ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকার চেক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। কলা অনুষদে ‘প্রমীলা বৃত্তি’, বিজ্ঞান অনুষদে ‘কাজী সব্যসাচী বৃত্তি’, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ‘কাজী অনিরুদ্ধ বৃত্তি’ এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ‘বুলবুল বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। বৃত্তি প্রদান করেন ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. জিল্লুর রহমান পল এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক ইফফাত আরা ইভা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন খতম ও বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।