গুজরাটে মুসলিম পুলিশ কনস্টেবলের দাড়ি ধরে টানাটানি, গলাটিপে হত্যার চেষ্টা

ভারতের গুজরাটে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের হাতে বর্বর হামলার শিকার হয়েছেন এক মুসলিম পুলিশ কনস্টেবল। হামলার সময় উগ্রবাদী হিন্দুরা তার দাড়ি ধরে টানাটানি করে এবং পরে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪৪ বছর বয়সী আহত ওই পুলিশ কনস্টেবলের নাম আরিফ ইসমাইল শেখ।

ভারতের গুজরাটের ভাদোদারা শহরে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর শনিবার ভাদোদারা সিটির জোন-৩ এর ডিসিপি সঞ্জয় খারাত সংবাদ সংস্থা নিউজক্লিককে জানান,‘মুসলিম কনস্টেবলের ওপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জানার পরপরই তদন্ত শুরু করেছি’। এদিকে এই ঘটনায় জড়িত ৩ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

হামলার শিকার ভূক্তভোগী মুসলিম পুলিশ কনস্টেবল আরিফ ইসমাইল শেখ জানান, গত ২৩ আগস্ট শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারী তাকে গালাগালি শুরু করে। এরপর তারা তাকে মারধর করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইপিসির ৩২৩, ১৪৩, ১৪৭, ৫০৪ এবং ৫০৬ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরিফ ইসমাইল শেখ আরো বলেন,‘প্রতাপনগর সদর দফতরে আমার ডিউটি​শেষ করে যখন আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম, তখন শিব শক্তি মহল্লার লোকাল পাশের রাস্তা পার হয়ে অজ্ঞাত এক যুবক আমার দিকে হাত দুলিয়েছিল। আমি তাকে শান্তভাবে রাস্তাটি অতিক্রম করতে বলার পরে, তিনি আমার দিকে এসে আমার ধর্মকে টার্গেট করে কথা বলতে শুরু করলেন।’

এফআইআর-এ ইসমাইল শেখ অভিযোগ করেন, আক্রমণকারীরা তার শারীরিক চেহারার সাথে সম্পর্কিত অবমাননাকর, “ওহ, বোদায়া!” এবং “ওহ, মুসলিম!” মন্তব্য করতে থাকে। এরপর একটি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন নিকটবর্তী জনবসতি থেকে পাঁচ থেকে সাত জন লোক তার সাথে যোগ দেয় এবং তারা সবাই আমাকে মারধর করতে থাকে। তারা আমার দাড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে। আমার মুখে আঘাত করে এবং তারা আমাকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করে। হামলাকারীরা এসময় নিজেদের মধ্যে, ‘আস আজ সবাই মিলে এই ব্যক্তিকে শেষ করে (হত্যা) ফেলি, মুসলমানরা তাদের সীমা ভুলে গেছে…,’ এমন কথা বলতে থাকে।

আরিফ বলেন, হামলাকারীরা তাকে মারধর করার পর তার মানিব্যাগটি পর্যন্ত নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে তারা পালিয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন,‘পুলিশ প্রথমত তার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে, এরপর অভিযোগ নিলেও যথাসাধ্য সহজ করে দেখানোর চেষ্টা করে। প্রথমে ঘটনাটিকে একটি সাধারণ ঝগড়া বা লড়াইয়ের মতো করে তুলে ধরে অবজ্ঞা পরে পুলিশ। এটা যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, পুলিশ তা না মেনে আক্রমণকে সাম্প্রদায়িক রঙ বাদ দিয়ে, অভিযুক্তকে সহজেই চলে যেতে সহায়তা করে। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণ এবং ঘৃণা অপরাধ, একথা মানতে নারাজ পুলিশ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সামাজিক কর্মী বলেন,‘যদিও এটা প্রথমবার নয়, এর আগেও ভাদোদারা সংখ্যালঘুদের (মুসলিম) উপর এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে একজন মুসলিম পুলিশ অফিসারের উপর হামলার ঘটনা বিরল। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।’

Share this post

scroll to top