ঢাকাFriday , 16 August 2019
  1. Correspondent
  2. English News
  3. আজকের ময়মনসিংহ
  4. আদালত
  5. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  6. ইসলাম ও জীবন
  7. এক্সক্লুসিভ ময়মনসিংহ
  8. করোনা আপডেট
  9. করোনায় সহযোগীতা
  10. খেলার সংবাদ
  11. চাকুরী
  12. ছবি গ্যালারী
  13. জাতীয় অহংকার
  14. জাতীয় নির্বাচন ২০১৮
  15. জাতীয় সংবাদ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ডেঙ্গু ও বন্যায় দিশাহারা মানুষ

Link Copied!

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সারা দেশে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এটি পরিণত হয়েছে জাতীয় দুর্যোগে। কিন্তু মন্ত্রী, এমপি, সিটি করপোরেশন মেয়ররা কাজের কাজ কতটা করছেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুরা সারা দেশের পরিস্থিতির যে চিত্র পত্রপত্রিকাসহ মিডিয়াতে তুলে ধরছেন তার জন্য তাদের শুধু ধন্যবাদ নয়, বরং এটি দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত। অথচ সরকারের কেউ কেউ তাদের ভয় দেখাচ্ছেন। সময় সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলছেন।

গত ১ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, ডেঙ্গু রোগ সারা দেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরও কেন তিনি মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন? তিনি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ধমকের সুরে তাকে বলেন ‘আপনি থামেন, থামেন’। এর আগে মন্ত্রী ডেঙ্গুবাহক এডিস মশাকে রোহিঙ্গাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মতো ডেঙ্গু মশার প্রডাকশন বেশি। রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, তেমনি ডেঙ্গু মশাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’ রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছেন, ফিলিপাইনে ৫০০ এবং ইন্দোনেশিয়াতে ডেঙ্গুর কারণে ৮০০ রোগী মারা গেছে, বাংলাদেশে ‘মাত্র’ আটজন মারা গেছে। এটা আমাদের সাফল্য (নয়া দিগন্ত, ২৬ জুলাই, ২০১৯)।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু রোগ বৈশ্বিক সমস্যা, পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভিয়েতনামেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, ভারতে কম আছে, ইন্দোনেশিয়ায় অনেক বেশি, থাইল্যান্ডেও ছড়িয়ে পড়েছে, সিঙ্গাপুরে অনেকে এতে আক্রান্ত। সে তুলনায় আমাদের দেশে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলেও ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়’। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকন বলেছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন- খুব শিগগিরই ওষুধ আসবে, তবে দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়।

সরকারের মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং মেয়ররা ব্লেম গেমের (দোষারোপের) আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে বোঝাচ্ছেন, আমাদের দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ‘তেমন কিছু নয়’। মানুষ যে মারা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিক। ‘সরকারের মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা যে এমন মন্তব্য করতে পারেন, তা ভাবতে কষ্ট হয়। বিশিষ্টজনের মতে, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ডেঙ্গু সারা দেশে ছাড়িয়ে পড়েছে। তাই সমস্যা এখন দুটি; তা হলো- ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা এবং মশা কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঢাকা ছাড়াও দেশের অনেক শহরে এডিশ মশা রয়েছে। সরকার বলেছে, ৬৪ জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্তত ২৬টি জেলায় আড়াই শতাধিক রোগী স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত। এর অর্থ, এসব জেলায় এডিশ মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়েছে।

সরকারি হিসাবে বছরজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা গত ১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। কোনো কোনো তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুরোগে ৬৯ জনের মৃত্যুর কথা জানা যায়।

এখন যে বিষয় জরুরি, তা হলো- যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, হাসপাতালে যাতে তারা হয়রানির শিকার না হন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার খরচে ভর্তুকি দেয়া সরকারের উচিত। ডেঙ্গু নিয়ে গলাবাজি না করে প্রতিরোধ ও বাঁচার উপায় বের করা উচিত। এখন প্রায় প্রতিটি অফিস-আদালত, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ না কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিংবা বাসায় কাতরাচ্ছেন। ঈদের সময় ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ গ্রামে যাবেন। এদের মাধ্যমে ডেঙ্গুর সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া এডিস মশা বেশি আছে এমন অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। তাই এসব ব্যাপারে আগাম পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

এদিকে, বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে সরকারি ত্রাণতৎপরতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ত্রাণ বরাদ্দ ও বিতরণের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর দুর্গত মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এসব ক্ষতি পূরণের জন্য সরকারের বিশেষ মনোযোগী হওয়া উচিত। একদিকে মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা, অন্য দিকে বানভাসিদের বঞ্চনা আর মানবিক বিপর্যয়। সমাজে ছেলেধরার গুজবের কারণে খুন-খারাবি, সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্নতা, তুচ্ছ কারণে একজন অন্যজনকে হত্যা করা। এদিকে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা। এমনকি শিক্ষকের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে, দেশের মানুষ ভালো নেই মোটেই। পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, হতাশা, মাদকের প্রভাব, সম্পদের লোভ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, পারিবারিক সুশিক্ষার অভাব, দুর্নীতি, আয়-বৈষম্য ইত্যাদি মানবিক বিপর্যয়ের কারণ।

শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতা, অপরিচ্ছন্ন নগর, মেরামতের নামে সময়ে-অসময়ে খোঁড়াখুঁড়ি, সিটিগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, দক্ষ দেশপ্রেমিক পরিচালকের অভাব, প্রভৃতি ডেঙ্গুর বিস্তারের জন্য কম দায়ী নয়। প্রতিটি পরিবার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে। হাসপাতালে অনেকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আছে। একটি পরিবারের কেউ হাসপাতালে থাকলে পরিবারের অন্যদের অবস্থা যে কেমন দুর্বিষহ, তা ভুক্তভোগীরাই সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করে। হাসপাতালগুলোতে যখন হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগী কষ্টে কাতরাচ্ছে, তখন বানভাসি মানুষ খোলা আকাশের নিচে কিংবা সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারিরত।

ছেলেধরার গুজবে যখন অভিভাবকেরা সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন, ধর্ষণের মতো বেহায়াপনা যখন সমাজে দেখা দেয়, তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা অর্জন ডেঙ্গু রোগী, বানভাসি মানুষ কিংবা ন্যায়বিচারবঞ্চিত ব্যক্তির কাছে কোনো মূল্য বহন করে না। মন্ত্রীর ধমক আর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে কিংবা ভয় দেখিয়ে বেশি দিন চলা যাবে না। জনগণের আমানতের হেফাজত করে জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য সরকারের বাস্তবমুখী ও কার্যকর ভূমিকা থাকা উচিত। পাশাপাশি পেশাজীবী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণীর জনগণের যৌথভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে, পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে এবং সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।

ই-মেইল: main706@gmail.com

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।