ঈদের ছুটির মধ্যে ডেঙ্গুতে ১১ জন মারা গেলেও মোট আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। ১৩ আগস্টে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দেখলে মনেই হতে পারে যে এডিস মশা বাহিত এই ভাইরাস জ্বরের আক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, খুব সহসা ডেঙ্গু জীবানুবাহী এডিস মশা হয়তো কমছে না।
বুধবারের চিত্রটা লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে। গতকাল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৮০ জন। কিন্তু হত মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ২০০ জন। এ সংখ্যাটা হয়তো বৃহস্পতিবার দুই হাজারের কোটা অতিক্রম করতে পারে। তাহলে ঈদের ছুটির মধ্যে কি কমে গেছে। যারা ডেঙ্গু চিকিৎসা করছেন তারা বলেছেন, হয়তো না। এটা হয়েছে ঈদের ছুটির কারণে। ঈদের ছুটির মধ্যে হাসপাতালে হয়তো আসতে চায়নি রোগীরা। অথবা রোগীর স্বজনরা একদিন পর ভর্তি করবেন এমন সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকতে পারেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেলে আজও (বুধবার) আগের দিনে প্রায় একই রকম সংখ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হতো। কিন্তু সরকারি হিসেবেই মঙ্গলবারের চেয়ে আজ (বুধবার) বেশি ভর্তি হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে গত ১১ আগস্ট দুই হাজার ৩৩৪, ঈদের দিন ১২ আগস্ট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৯৩ জন। চলতি বছরের জানয়িারি থেকে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৫১ জন।
গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৯। বুধবার এ সংখ্যা বেড়ে ৪০-এ দাঁড়িয়েছে। অবশ্য সরকারি হিসেবের সাথে বেসরকাইর হিসেবের যথেষ্ট অমিল রয়েছে। বেসরকারি হিসেবে হিসেবে একশোর ঘরে পৌঁছে গেছে মৃত্যু। নিশ্চিত না হয়ে সরকারিভাবে মৃত্যু বলা হয় না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা।
বুধবার রাজধানীর চেয়ে রাজধানীর বাইরের অন্যান্য এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। রাজধানীতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৫৪ জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৮২ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ছিল ২৭২। কেবল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় (বুধবার দুপুর ১২টার পূর্বের ২৪ ঘন্টায়) ১৪৭ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে ৮৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭৩, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১, পুলিশ হাসপাতালে ১৫, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৭, কর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫২, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৩ জন। ঢাকার বাইরের ঢাকা বিভাগে ২৭৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৪, খুলনা বিভাগে ১৬৫, রাজশাহী বিভাগে ১৩২, রংপুর বিভাগে ১১৪, বরিশাল বিভাগে ১৫৬, সিলেট বিভাগে ২১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে খোলা আকাশের নিচে পরিস্কার পানিতে মশা জন্মানোর কিছুটা কমে যাবে কিন্তু রাজধানীর নির্মাণাধীন ভবনগুলোর পরিস্কার পানিতে মশা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এসব নির্মাণাধীন ভবনে সামনে আরো কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকবে ঈদ জনিত ছুটিতে শ্রমিকদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে চলে যাওয়ার কারণে। রাজধানীতে এ মুহূর্তে হাজারের বেশি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মশক নিধনে নিযুক্ত শ্রমিক এসব স্থানে ফগিং করতেও যায় না। ফলে অবাধে মশা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাপক ভিত্তিক প্রচারণার কারণে ঘরের ভেতর মশা খুব বেশি থাকছে না। ঈদের ছুটির মধ্যে যারা বাড়ি গেছেন তারা মশা জন্মাতে পারে এমন স্থানগুলো পরিস্কার করে গেছেন। ফলে মশা উৎপাদনের জন্য নির্মাণাধীন ভবনই একমাত্র আশ্রয়স্থল হতে পারে।