থমথমে কাশ্মির

কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগর যেন এক ভুতুড়ে শহর। হাট-বাজার দোকানপাট বন্ধ। স্কুল কলেজও বন্ধ। সড়কে লোকজনের দেখা নেই। সর্বত্রই শুধু ভারী অস্ত্র হাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনীর টহল। রাস্তায় যানবাহন বলতেও সামরিক যানই সব।

রোববার থেকে কার্যত অচল শ্রীনগর। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ, উপত্যকাজুড়ে বিধিনিষেধ এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনে শ্রীনগরে দখলকৃত কোনও শহর বলেই মনে হচ্ছে।

স্থানীয় নাগরিকরা জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। জম্মু-কাশ্মির পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কখনও পড়িনি। এই বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আমরা টিভি থেকে ঘটনা জেনেছি। আপাতত আমরা শুধু নির্দেশ পালন করছি।

বিবিসি জানিয়েছে, কাশ্মিরে এখন টেলিযোগাযোগ ও মিডিয়া ব্ল্যাকআউট চলছে। যার কারণে প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না সংবাদ মাধ্যমেও। ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে কাশ্মিরের জনগন যেমন হতাশা তেমনি ক্ষোভে ফুঁসছে তারা। ফলে সেখানে বড় আকারের বিক্ষোভ হতে পরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদকর্মীদের ওপরও চলছে নানা বিধিনিষেধ। বিবিসির আমির পীরজাদা অনেক কষ্টে লোকজনের সাথে কথা বলতে পেরেছেন। তাদের প্রায় সবার মধ্যেই ক্ষোভ ও ভারত সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এমনটা মনে করছেন।

বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হতে পারে এই আশঙ্কায় স্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় বাহিনী। তবে তারপরও কিছু জায়গায় বিক্ষোভ ও সেনাদের ওপর পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে অবস্থান করছেন এমন কাশ্মিরীরা জানিয়েছেন, তারা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এম. টেক ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীর হাতে ছিল ৩৭০ ধারা বাতিলের খবর সম্পর্কিত একটি স্ক্রিনশট। তিনি বলেন, আমি পুলওয়ামাতে থাকি। জানি না আমার বাবা-মা এই খবর সম্পর্কে জানেন কিনা। স্যাটেলাইটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। শ্রীনগর পৌঁছে যদি কোনও গাড়ি না পাই তাহলে আমাকে হেঁটে পুলওয়ামা যেতে হবে।

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত এই শিক্ষার্থী। বলেন, পড়াশোনা শেষ করে কাশ্মিরের কোনও কলেজে শিক্ষকতার পরিকল্পনা ছিল আমার। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় আমার এই সুযোগও শেষ। এমনিতেই কাশ্মিরে কোনও কর্মসংস্থান নেই। তারা মনে করছে এভাবে আমাদের মন জয় করা যাবে। কিন্তু এটা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তারা শুধু কাশ্মির চায়, কাশ্মিরিদের নয়।

কাশ্মিরে লক্ষাধিক অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। বিবিসি বলেছেন, কাশ্মির এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিক উপস্থিতিপ্রবণ এলাকায়।

Share this post

scroll to top