২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন ইউনিটের অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যাবে।
সোমবার বিকেলে প্রশসনিক ভবনের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ভর্তি প্রক্রিয়া উদ্বোধনকালে ভিসি জানান, এ শিক্ষাবর্ষে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ৭ হাজার ১১৮টি। এর মধ্যে ক-ইউনিটে ১ হাজার ৭৯৫, খ-ইউনিটে ২ হাজার ৩৭৮, গ-ইউনিটে ১ হাজার ২৫০, ঘ-ইউনিটে ১ হাজার ৫৬০ এবং চ-ইউনিটে ১৩৫টি আসন রয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষার মানবণ্টন বিষয়ে ভিসি বলেন, এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) এবং ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীরা এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৫০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪০ মিনিট সময় পাবে।
এ সময় ইউনিট ভিত্তিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেন তিনি। ভিসি বলেন, এবার ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার, গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার এবং চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (অংকন) ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
ভর্তি পরীক্ষার ফি এবং প্রবেশ পত্র ডাউনলোডের নির্দেশনা দিয়ে অধ্যাপক আখতারজ্জামান বলেন, এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার ফি জমা দেওয়া যাবে। টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২৮ আগস্ট বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ‘ক’, ‘খ’, ও ‘ঘ’ ইউনিটের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা থেকে পরীক্ষার দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত।
‘গ’ ও ‘চ’ ইউনিটের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে ৩০ আগস্ট বিকাল ৩টা থেকে পরীক্ষার দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত। সর্বোপরি ভর্তির বিস্তারিত তথ্য ওয়েবসাইট (http://admission.eis.du.ac.bd)এবং ভর্তির নির্দেশিকা থেকে জানা যাবে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্বোধনকালে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, ফার্মেসী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রহমান, অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার আদিত্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েক বছর ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্বোধনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসিগণ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে উপস্থিত থাকতে দেখলেও এদিন তাদেরকে দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে সিনেটে ভিসি প্যানেল নির্বাচন নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন হলো প্রশ্ন পদ্ধতির পরিবর্তন। অন্যান্য বছর শুধু বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকলেও এবারে শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে বিগত কয়েক বছর যাবৎ অভিযোগ ওঠার ফলে এমন সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়ানো হয়েছে। গত বছর অনলাইন ভর্তি ফি ৩৫০ টাকা হলেও এ বছর ফি ১০০ টাকা বাড়িয়ে ধার্য করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
এর কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো, আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্বতিতে সংস্কার আনার কারণে নামমাত্র ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত বছর শুধু বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকলেও এবার শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষায় লেখার একটা অংশ রয়েছে। এজন্য এ ফি বর্ধিত করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরই ভর্তি পরীক্ষার আসন সামান্য কমেছে। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির আসন ছিলো ৭ হাজার ১২৮টি। এবছর শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ৭ হাজার ১১৮টি। সে হিসেবে আসন কমেছে ১০টি। এবছর আসন কমলেও এর আগের প্রায় প্রতি বছরই আসন বাড়াতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ এই পাঁচ শিক্ষাবর্ষের প্রতিটিতে আসন বৃদ্ধি করেই চলছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ২০টি আসন বৃদ্ধি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগের চার শিক্ষাবর্ষে বেড়েছে ৭০৫ আসন। সব মিলিয়ে গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে আসন বেড়েছে মোট ৭২৫টি। এর মধ্যে সর্বাধিক ২৮৩টি আসন বেড়েছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে।
আর সর্বনিম্ন ২০টি আসন বেড়েছে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে। গড়ে প্রতি বছর ১৪৫টি আসন বেড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি না করেই এ আসন বাড়ায় কর্তৃপক্ষ।
তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার লক্ষ্য করা গেছে যে আসন বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে সরে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আসন না বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আসন কমিয়ে আনাটাও সমীচীন নয় বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বর্তমানের শিক্ষার্থীদের জন্য এতটা অনুকূল নয়। বিগত বছরগুলোতে যেভাবে আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে হয়নি। ফলশ্রুতিতে অপরিকল্পিত সম্প্রসারণের ফলে গুণগত মানের ওপর প্রভাব পড়েছে। পাবলিক প্রতিষ্ঠান যেহেতু তাই কমানোও কঠিন, তাই প্রায় সমসংখ্যক রাখা হয়েছে।