ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতলে প্রয়োজনীয় ভুর্তকী প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।শনিবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব রাখছি যে সেটা হচ্ছে, সরকার ডেঙ্গু চিকিৎসায় জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকী দেবে এবং জনগনের জন্য ডেঙ্গু জ্বর বিনামূল্যে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
‘সরকার এতো টাকা খরচ করতে পারে বিভিন্ন সেক্টরে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল কোটি কোটি টাকা জমা হয়, সেটা দেখা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য চলে যায়, তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ যখন বিপদে পড়েছে তখন তাদের জন্য এই অর্থ (ত্রাণ তহবিলের) ব্যবহার করাটা অত্যন্ত জরুরী বলে আমরা মনে করি এবং সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে আরো ফান্ড যোগার করে সেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য।’
ডেঙ্গু রোগের ব্যাপকতার কারণে হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মহানগরীর কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘অনলাইনে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, `আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের সহযোগিতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে থেকে অনলাইনে ডেঙ্গু রোগীদেরকে ডাক্তাররা পরামর্শ দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল আমার একটা বক্তব্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। জরুরী অবস্থার বিষয়টি। আসলে এটি ওইভাবে আমি ঠিক বলতে চাইনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি তাহলো আপদকালীন জরুরী ব্যবস্থা।’ ‘ অর্থাৎ ডেঙ্গু একটা বড় রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে যেটা মোকাবিলায় আমি আপদকালীন জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে জরুরী অবস্থার কথাটা বলেছিলাম। আসলে এটার মিনিংটা হচ্ছে, বড় আপদ বলে আপদকালীন জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি কথাটা বলেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়া এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বক্তব্যসমূহ মিলিয়ে এটা একটা লেজে গোবরে তৈরি করে ফেলেছে সরকার। তারা এই সমস্যা সমাধান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’
‘এটা এখন এতো বড় আকার ধারণ করেছে যে, এটা এখন ৬৪ জেলায় চলে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ব্যবস্থা দরকার ছিলো সে ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি। অর্থাৎ মশা মারার জন্য যে ঔষধ যেটা তারা আনতে পারেনি এবং এতো অল্প সময়ের মধ্যে আমদানি করার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’
নিজের বাসা উত্তরায় মশার উপদ্রুপের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমি যে বাসায় থাকি তার পাশেই একটা বড় পাকা ড্রেন আছে যা আজ পর্যন্ত আমি দেখিনি পরিস্কার করা হয়ে্ছে। আর মশার ঔষধ যারা দেয় তাদেরকে গত দেড় মাস আমি দেখিনি। ঢাকা শহরে এই ব্যাপারটা সবাই জানে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, নিজে নিজের উদ্যোগে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ্খানে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে, তারা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এটা এতো অপ্রতুল যে, ল সুবিধা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছিলো পরীক্ষার জন্য, সেটা কিন্তু তিনটা পরীক্ষা করতে হয়। ফলে ১৫ শ টাকা এমনি এসে যায়।’
‘বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে’
বন্যা পরবর্তি দূর্গতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ত্রান কমিটির নেতৃত্বে ড্যাব দূর্গত এলাকায় ঔষধ-পত্র বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দেবে বলে জানান তিনি। একই সাথে কৃষকদের কৃষি পূর্ণবাসনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়ে্ছে। এই কমিটিতে কৃষক দল ও এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ থাকবেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ডের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। এটাকে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করেছে দুর্নীতির কারণে। এই বিষয়টা জাতির কাছে একেবারে অস্পষ্ট। এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো কিছু জাতি জানে না ‘
‘আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছ থেকে একটা পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দাবি করছি।’
‘প্যারোলে মুক্তির সংবাদ সঠিক নয়’
কয়েকটি গণমাধ্যমে খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সোদি আরব যাচ্ছে- এই রকম সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না, এই সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আসলে প্যারোলের ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করিনি, কোথাও কোনো চিঠিও দেয়নি, আমরা কোথাও কোনো কথাও বলিওনি।’
‘সুতরাং এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না আমাদের দিক থেকে, আওয়ার পার্টি পয়েন্ট অব ভিউ। এটা সম্ভবত ওই যে সৃজনশীলতা আপনাদের সাংবাদিকদের সেখান থেকে বোধহয় এসেছে আর কী।’
বিএনপি মহাসচিব জানান, ঈদের পর খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরো বেগবান করার জন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলো দ্রুত শুরু করা হবে। বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।