প্রথমটি ৯১ রানে ও দ্বিতীয়টি ৭ উইকেটে হেরে এক ম্যাচ আগেই স্বাগতিক শ্রীলংকার কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খুইয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। এখন শ্রীলংকার কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জার সম্মুখীন টাইগাররা। তাই এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন তামিমের দলের।
আজ বুধবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জয় তুলে নিয়ে ভালোভাবে সফর শেষ করতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ। অপরদিকে, জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে পঞ্চমবারের মত বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে চায় শ্রীলংকা। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে নতুনভাবে পথ চলার লক্ষ্য নিয়ে এবারের শ্রীলংকা সফর শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বাদশ বিশ্বকাপে দশ দলের মধ্যে অষ্টম হয় টাইগাররা। ঐ দুঃখ ভুলতে তিন ম্যাচের সিরিজে ভালো খেলার লক্ষ্যই ছিলো তামিমের নেতৃত্বাধীন দলটির।
কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে পুরোপুরি নিষ্প্রভ বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান বাদে দলের সকল খেলোয়াড়ই ফ্লপ। দু’ম্যাচের কোন বিভাগে এক সাথে জ্বলে উঠতে পারেননি দল। তাই টানা দু’ম্যাচ হেরে শেষ ওয়ানডে বাকী থাকতেই সিরিজ খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।
অনুশীলন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছিলো বাংলাদেশ। শ্রীলংকা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিলো তারা। ২৮৩ রানের টার্গেট ১১ বল বাকী রেখেই স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। তাই আত্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে টগবগেই ছিলো টাইগাররা। কিন্তু মূল লড়াইয়ে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের।
প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে ৯১ রানে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। পেরেরা মারমুখী মেজাজে ৯৯ বলে ১১১ রান করেন। জবাবে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান মুশফিকুর-সাব্বির। পঞ্চম উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্য প্রদর্শন করেন তারা। ৯৯ বলে ১১১ রানের জুটি গড়েন মুশফিক-সাব্বির। এতে খেলায় ফিরেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ৭টি চারে ৫৬ বলে ৬০ রান করে থেমে যান সাব্বির। এরপর উইকেটে সেট হওয়া মুশফিককে কেউই সঙ্গ দিতে না পারায় ২২৩ রানে গুটিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে। মুশফিক করেন ৮৬ বলে ৬৭ রান।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নিয়ে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। আবারো ব্যর্থ হন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। স্কোরবোর্ডে ৮৮ রান যোগ হতেই পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। এ অবস্থায় আবারো বাংলাদেশের ত্রানকর্তার ভূমিকা নেন মুশফিক। এবার আর সাব্বিরের সহায়তা পাননি তিনি। পেয়েছেন লোয়ার-অর্ডারের মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গ। তাই সপ্তম উইকেটে ৮৪ রান শ্রীলংকার বোলারদের কাছ থেকে আদায় করে নেন মুশফিক-মিরাজ। এতে ২শ রানে পৌছায় বাংলাদেশের স্কোর।
মিরাজ ৪৩ রানে থামলেও এক প্রান্ত আগলে বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন মুশফিক। তার চেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও, ৮ উইকেটে ২৩৮ রানের সম্মানজনক স্কোরে পৌছাতে পারে বাংলাদেশ। কারন শতরানের আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো টাইগাররা। দলকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দিতে না পারার সাথে সাথে ব্যক্তিগত আক্ষেপও ছিলো মুশফিকের। কারন মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১০ বলে অপরাজিত ৯৮ রান করেন মুশফিক।
তবে বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া ২৩৯ রান টপকাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি শ্রীলংকার। ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোর ৮২ ও সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩২ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌছে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলংকা। ৪৪ মাস পর দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলো করুনারতেœর দল।
সিরিজ হারের পর হতাশা ঝড়েছে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিমের। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরির কারনে ও দলের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান বিশ্রামের জন্য শ্রীলংকা সফরে আসেননি। তাই দলের নেতৃত্ব ভার বাঁ-হাতি ওপেনার তামিমের কাঁেধ। সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর তামিম বলেন, ‘আমাদের ভালো শুরু দরকার ছিল। কিন্তু একশর আগেই ৫ উইকেট হারানোয় সবকিছুই কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও ২৩৮ রানের পুঁিজতে আমরা যেভাবে বোলিং করেছি তাতে ৩০০ রানও যথেষ্ট হতো না। আমরা কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা ভালো করতে সহজ উপায় খুঁজেছি।’
প্রথম দুই ম্যাচে দলের টপ-অর্ডারের ব্যর্থতা বেশ চোখে পড়েছে। টপ-অর্ডারদের এই ব্যর্থতায় অনেক বেশি চাপে পড়ে যান মুশফিক, দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে তা স্বীকার করেন তিনি। মুশফিক বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করা আমার জন্যও অনেক কঠিন। অনেক সময় ঝুঁকি নিতে চাইলেও ব্যাক অফ মাইন্ডে থাকে যে, উইকেট পড়ে গেলে হয়তো-বা রানটাও হবে না। পরের দিকে বা শেষের দিকে কেউ তো নেই। তখন কঠিন হয়ে যায়।’
দুই ম্যাচে তামিম ১৯, সৌম্য সরকার ২৬, মোহাম্মদ মিঠুন ২২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৯, মোসাদ্দেক হোসেন ২৫ রান করেন। দলের টপ-অর্ডারের ব্যাটিং রান এমন হলে প্রতিপক্ষের মাঠে জয়ের চিন্তা করাটা কঠিনই বটে। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মুশফিক-সাব্বির ও মিরাজ। দুই ম্যাচেই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া মুশফিক সর্বমোট ১৬৫ রান করে সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে সাব্বিরের রান ৭১। সাব্বিরের মত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ছোট হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। তার ৪৩ রানে দলকে সম্মানজনক পুঁজি এনে দিতে পেরেছিলেন মুশফিক। তাই দু’ম্যাচে মিরাজের রান ৪৫। সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় সবার উপরে বাংলাদেশের মুশফিক থাকলেও, পরের চারটি স্থানেই আছে শ্রীলংকানরা।
ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার বৃত্তে থাকলেও বাংলাদেশের বোলারর নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। দুই ম্যাচে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ৪ উইকেট। প্রথম ম্যাচে ৬২ রানে ৩ উইকেট নিলেও, পরেরটিতে উইকেটশুন্যই ছিলেন ডান-হাতি পেসার শফিউল ইসলাম। এছাড়া মিরাজ ২টি, সৌম্য-রুবেল ১টি করে উইকেট নেন।
প্রথম দুই ম্যাচে যখন দলের খেলোয়াড়দের এই হাল, সেক্ষেত্রে তৃতীয় ম্যাচে একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলেছিলো বাংলাদেশ। পেসার রুবেলের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে উইকেট শিকার করতে পারেননি তিনি। তবে প্রথম ম্যাচে ৯ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন রুবেল। তবে এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তাসকিন আহমেদ, ফরহাদ রেজা এবং এনামুল হক বিজয়ের। তাই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে এই তিনজনের যে কারও একাদশে সুযোগ সম্ভাবনা রয়েছে।
এক ম্যাচ বাকী রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ায় বেশ খুশী ছিলেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো পারফরমেন্স করেছি। দেশের মাটিতে ৪৪ মাস পর ওয়ানডে সিরিজ জিতলাম। ব্যাটসম্যান-বোলাররা ভালো করেছে।’
বাংলাদেশ দল : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, ফরহাদ রেজা এবং এনামুল হক বিজয়।
শ্রীলংকা দল : দিমুথ করুনারতেœ (অধিনায়ক), কুশাল পেরেরা, আভিস্কা ফার্নান্দো, কুশাল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, লাহিরু থিরিমান্নে, শেহান জয়সুরিয়া, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকা, বান্দিু হাসারাঙ্গা, আকিলা ধনঞ্জয়া, আমিলা আপোনসো, নুয়ান প্রদীপ, কাসুন রাজিথা, লাহিরু কুমারা, থিসারা পেরেরা, ইসুরু উদানা।