সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির সদ্যপ্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুর-৩ সদর শূন্য আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন কারা, কে হবেন এই শূন্য আসনের জাপা প্রার্থী- তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। আসনটি জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের ঘরেই থাকবে, নাকি বেদখল হয়ে চলে যাবে আওয়ামী লীগের নৌকায়-তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতোমধ্যে বিএনপিও এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও আসনটি জাপাকে ছাড় দিতে নারাজ। এর ফলে দলগুলোর মধ্যে চলছে মনোনয়ন লড়াই। রংপরের জাপার স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, এরশাদের মৃত্যুর পর তার জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির জনপ্রিয়তা আরো অনেক বেশি বেড়েছে। এ আসনে যে-ই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করুক না কেন তার সাথে অন্য কোনো দল পাত্তাই পাবে না।
এ দিকে জাতীয় পার্টিসহ কোনো দলই এখন পর্যন্ত মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন। ১৯৯০ সালে ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কারাবন্দী অবস্থায়ও তিনি দুইবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিপরীতে ভোটের রাজনীতিতে এখানে কখনোই ভালো ফলাফল করতে পারেনি বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাফফর হোসেন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম রাজুর নাম শোনা যাচ্ছে। অপর দিকে জাতীয় পার্টি থেকেই একাধিক প্রার্থীর নাম যাচ্ছে। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ চাইছেন ছেলে শাদ এরশাদকে এই আসনে প্রার্থী করতে। কিন্তু সাদের রংপুরে নিয়মিত যাতায়াত না থাকায় স্থানীয় জাপা নেতাকর্মীরা তাকে গ্রহণ করবে কি না-তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। অনেকে এরশাদের আমেরিকান প্রবাসী ছোট ভাই ড. হুসেইন মুর্শেদের কথা বলছেন, তবে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো আগ্রহ দেখাননি। এরশাদের আরেক ভাতিজা জাপা থেকে বহিষ্কৃত আসিফ শাহরিয়ার মনোনয়ন চাইলেই জেলা রংপুর তাকে মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন জেলা নেতারা। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতারা এরশাদ পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। এ ছাড়াও জাপা থেকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও জেলা জাপা নেতা আব্দুর রাজ্জাকও পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
এ দিকে ভোটের বাজারে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশার নামও শোনা যাচ্ছে। তার সমর্থকদের যুক্তি হচ্ছে- এই আসনটি এরশাদের পরিবারের উত্তরসূরিদের মধ্যেই থাকা উচিত। সেদিক থেকে হয় এরশাদের বড় ছেলে সাদ এরশাদ নয়তো- এরশাদের সবচেয়ে আদরের সন্তান এরিক এরশাদের গর্ভধারিণী বিদিশাকে মনোনয়ন দেয়া হলে সব দিক থেকেই ভালো হবে। এই মুহূর্তে ‘ক্যারিসমেটিক’ বিদিশাকে জাপার রাজনীতিতে সক্রিয় করতে পারলে আখেরে দলের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিদিশা বলেছেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া এরিকের বাবা এরশাদের মৃত্যুর ৪০ দিন এখনো পার হয়নি। এই সময়টা পার হোক, তারপর দেখা যাবে। তা ছাড়া পুরো বিষয়টা নির্ভর করে রংপুরের মানুষের ওপর। দলের সিনিয়র নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন কে সেখানে প্রার্থী হবেন। তবে তিনি মনে করেন, এরশাদের বড় ছেলেই সেখানে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রথম দাবিদার। বিষয়টা বেগম রওশন এরশাদের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ এরশাদের প্রথম উত্তরসূরি তার দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী রওশন এরশাদ। তার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।