শরীয়তপুর জেলা শহরের কোর্ট বাজারে সিএনজি শো-রুমে শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা হামলা চালিয়ে ৩টি পিকআপ ভ্যানসহ ৯টি সিএনজি ভাংচুরসহ শো-রুমের ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাবে ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী।
সোমবার বেলা পোনে ১২ টায় জেলা শহরের ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন সিএনজি শো-রুম আর.কে মটরস উদ্বোধন হওয়ার আগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ডিবিসি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি বিএম ইশ্রাফিল ভাংচুরের ভিডিও ধারণ করায় তার উপরও হামলা চালায় শ্রমিক সংগঠনের লোকজন। এতে সাংবাদিক ইশ্রাফিল আহত হয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও সুমন নামের পালং বাজারের এক ব্যবসায়ী মোবাইল ফোনে ভাংচুরের ছবি ধারণ করায় তাকেও মারধরসহ হামলায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে।
তবে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামলা ও ভাংচুরের কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, অবৈধ যানবাহন চলাচল করায় বাস শ্রমিকরা সোচ্চার হয়েছে। অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা না হলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখার দাবীও করেছে।
পুলিশ বলছে, দু’পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা ঘটনা ঘটেছে। এটা সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শো-রুমের জয়নাল আবেদীন, রহমান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শরীয়তপুর শহরের কোর্ট সংলগ্ন ট্রাফিক বক্সের মাত্র ২৫ গজ দুরে আর কে মটরস পরিবেশ বান্ধব সিএনজি শো-রুম উদ্বোধনের জন্য শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুকে প্রধান অতিথি হিসাবে দাওয়াত করে। সোমবার দুপুর ১২টায় এ শো-রুম উদ্বোধন করার কথা থাকলেও এমপি ইকবাল হোসেন অপুর অন্য একটি কর্মসূচী থাকায় তার আসতে দেরি হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে শরীয়তপুর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা সিএনজি শো-রুমে ঢুকে হামলা চালিয়ে ৩টি পিকআপ ভ্যানসহ ৯টি সিএনজি ভাংচুরসহ শো-রুমের ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাবে ভাংচুর করেছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শোরুমের মালিক খান এ মামুন রুবেল। এতে ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৪০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী। এ সময় শো-রুমের নুর হোসেন, সেকান্দর মোড়ল, ও জয়নাল বেপারীসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে পালং মডেল থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। ঘটনার পর কোর্ট বাজার বণিক সমিতি বিচারের দাবীতে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। পরে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিচারের আশ্বাস দিলে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়।
এ ব্যাপারে আরকে মটরস এর মালিক খান এ মামুন রুবেল বলেন, আমি সিএনজি শো-রুম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার জন্য শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ করে বাস- মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু বেপারী ও বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদারের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন শ্রমিক আমার সিএনজি শোরুমে ঢুকে আমার ১২টি সিএনজি, ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। এতে আমার কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শরীয়তপুর আন্ত:জেলা বাস ও মিনি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, আমরা কোন সিএনজি ভাংচুর করিনি। কে বা কারা ভাংচুর করেছে তা জানি না। বরং অটোবাইক মালিক শ্রমিকরা আমাদের ৪টি বাস ভাংচুর করেছে।
আহত বেসরকারি টিভি ডিবিসির সাংবাদিক বিএম ইশ্রাফিল বলেন, ঘটনার শেষের দিকে আমি ভাংচুরের ছবি ধারণ করি। এ সময় শরীয়তপুর বাস-মিবিাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদারের নেতৃত্ব কয়েক জন শ্রমিক আমার উপর হামলা চালিয়ে ধারণকৃত ভিডিও ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এক পর্যায়ে আমি আমার মোবাইল ক্যামেরা ধারণ করা ভিডিও না দেয়ায় তারা আমার উপর হামলা করে। পরে আমি মাটিতে পরে গেলে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে আমাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আমি এ ঘটনায় মামলা করবো।
পালং মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, বাস ও অটোবাইক উভয় গ্রুপের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। স্থানীয় এমপি সাহেব ও পুলিশ প্রশাসন বসে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। আশা করি শান্তি পূর্ণ সমাধান করতে পারবো।