রিফাত হত্যা : চার্জশিট দাখিলের আয়োজন

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হবে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে। মামলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী এবং পরে বনে যাওয়া মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হওয়া মিন্নির জামিন শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রিফাত হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। গত এক মাসে এ মামলায় ১৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স অ্যাকাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এরপর রিফাতের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিলেও ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বরগুনার পুলিশ প্রশাসন। এরপর চেকপোস্ট, কড়া নিরাপত্তা ও তল্লাশিতে একে একে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, প্রতারণার শিকার হয়েছি আমি। কিশোর (মিন্নির বাবা) সবকিছু জেনে বুঝে রিফাতের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে দিয়েছে। আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নি জড়িত। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে মিন্নিকে এ মামলার আসামি করা হয়নি। কারণ আমার কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি মিন্নি হত্যাকান্ডে জড়িত। কিন্তু যখন আমি বুঝতে পেরেছি মিন্নি হত্যাকান্ডে জড়িত তখন আমি মিন্নিকে গ্রেফতারের জন্য সংবাদ সম্মেলনসহ মানববন্ধন করেছি। তার জামিন হোক আমি তা চাই না। ছেলে হত্যার বিচার চাই, এতে রাজনীতির কোনো প্রশ্নই আসে না।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বলেন, প্রথমে আমি বলেছিলাম বরগুনার এমপি শম্ভু এবং তার ছেলে সুনাম এ মামলা ঘোরাচ্ছে। পরে বুঝতে পারছি আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। তাই আমি তাদের দোষারোপ করছি না।
তিনিও আরও বলেন, মিন্নিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। কারণ আমার মেয়ে অসুস্থ। আমার মেয়ে নির্দোষ। তাই জামিনের জন্য আমি পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।

মামলার সাক্ষী এবং হত্যাকান্ড ঘটনার সময় উপস্থিত বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল ইসলাম রনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে কলেজে আসার পথে রিফাতের ওপর হামলা হতে দেখে তাদের থামাতে চেষ্টা চালিয়ে গেছি। হয়তো আমার সঙ্গে দু’একজন থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না।

এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, রিফাত হত্যা মামলার শুনানির পর বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী জামিন বলেছেন, মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী এবং অন্যতম আসামি রাব্বি আকন হত্যাকান্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মিন্নি নিজেও এ হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মিন্নির আইনজীবী ও বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নির জামিন আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে মিন্নির জামিনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করবো আমরা।

পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে জানা যায়, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ভিডিও, নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মেয়েদের একটি জামা, একটি চিরুনি, খোদাই করে লেখা এন+এম লেখা একটি শামুক, নয়ন ও মিন্নির একসঙ্গে একটি ছবি, মোবাইল ফোনসহ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, অতিশিঘ্রই এ হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। এ মামলার ১৫ জন অভিযুক্ত গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Share this post

scroll to top