ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২৩৭ নম্বর কক্ষে এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থীর অপরাধ, তিনি তাঁর ইমিডিয়েট সিনিয়রদের টপকে বেশি সিনিয়রদের কাছ থেকে ‘ছুটি’ নিয়েছেন।
জানা গেছে, সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হটাতে বুধবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দিনের শুরুর এই ‘কর্মসূচি’তে না যাওয়ার বিষয়ে ইমিডিয়েট সিনিয়রদের টপকে বেশি সিনিয়রদের কাছ থেকে ‘ছুটি’ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত ও সূর্যসেন হলের সংযুক্ত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এতে ক্ষিপ্ত হন মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী আরাফাত হোসেন অভি। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে হলের ২৩৭ নম্বর কক্ষে আবু সাঈদকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন অভি। অভি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে অধ্যয়নরত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সূর্যসেন হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের হটাতে বুধবার ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রথম বর্ষের সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। ব্যক্তিগত কারণে আবু সাঈদ এই কর্মসূচি থেকে ‘ছুটি’ নেন। তবে দ্বিতীয় বর্ষের ‘বড় ভাই’দের কাছ থেকে ‘ছুটি’ না নিয়ে জ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে ‘ছুটি’ নেন সাঈদ। অনেকটা এর ব্যাখ্যা চাইতেই বুধবার মধ্যরাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের ২৩৭ নম্বর কক্ষে তলব করেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সেখানে দ্বিতীয় বর্ষের ‘বড় ভাই’দের ডিঙিয়ে ছুটি নেওয়ায় প্রথম বর্ষের আবু সাঈদকে বেদম মারধর করেন দ্বিতীয় বর্ষের আরাফাত হোসেন অভি।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আরাফাত হোসেন অভি বলেন, এটি তাঁর বিরুদ্ধে ‘প্রতিপক্ষ গ্রুপের চক্রান্ত’।

রাতে মারধরের শিকার আবু সাঈদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ভয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ঘটনাটি তাঁর জানা নেই। তবে জোর করা বা কারও গায়ে হাত তোলার মতো অপরাধ কেউ করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আবাসনসংকট থাকায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে আসন বরাদ্দ পান না। হলে থাকতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অধীনে তাঁদের গণরুমে উঠতে হয়। এটা এক রকমের অলিখিত নিয়মই।
গণরুমে থাকার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারলে ‘বড় ভাই’দের আগে থেকে জানাতে হয়। একে বলা হয় ‘ছুটি’ নেওয়া। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘ছুটি’ নিতে হয়।

Share this post

scroll to top