সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। ক্লাস বর্জনের বিষয়টি নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনকারীর আশেপাশের রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচল রন্ধ করে দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সস্টিটিউটের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে একত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও সদস্য তানবীর হাসান সৈকত।
এর আগে সকাল এগারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির চতুর্মুখী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। এসময় তারা ‘ঢাবির বাস আটকায় কে? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শোন বোন শোন ভাই, ঢাবির কোনো শাখা নাই’, ‘রাখতে ঢাবির সম্মান সাত কলেজ বেমানান’ ইত্যাদি ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে প্রায় দুই ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধের পরে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে ক্লাস বর্জন কর্মসূচীর ঘোষণার মাধ্যমে ওইদিনের আন্দোলন সমাপ্ত করেন তারা।
আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে থেকেই অধিভুক্ত সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করতে হবে, দুই মাসের মধ্যে সব পরীক্ষার ফলাফল দিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে হবে এবং ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, অধিভুক্ত রাজধানীর বড় সাত কলেজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে অতিরিক্ত চাপে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অবরোধকারীরা এর আগে ৭ কলেজের আন্দোলনের সময় ঢাবির বাস আটকে দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভ চলাকালে ঢাবির রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তমা হক তামান্না বলেন, আমাদের প্রথম ও প্রাণের দাবি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা কঠোর অবস্থান চালিয়ে যাব। প্রশাসন কেন আমাদের কথা না শুনে সাত কলেজের প্রতি এতো প্রেম দেখাচ্ছে সেটাই আমরা বুঝি না। আমরা প্রশাসনকে অনেকবার এই ব্যাপারে জানিয়েছি; কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা কানে নিচ্ছে না। ডাকসু শুধু আমাদের আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু কোনো কাজ করছেন না।
আইয়ুব বলেন, সাত কলেজের কারনে আমাদের মাঝে মাঝে পরিচয় সংকটে পরতে হয়। অনেকে জিজ্ঞাসা করে ঢাবির কোন শাখায় পড়ি। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক এবং হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের মতো। ঢাকা কলেজ থেকে শুরু করে অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বিনোদনস্থল এবং মাদকের রুট হিসেবে ব্যাবহার করে। প্রাশাসনিক কাজ করার জন্য আমাদের প্রশাসনিক ভবন আমাদের জন্যই যথেষ্ট না। সেখানে সাত কলেজ কিভাবে সামলাবো আমরা?
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ঢাবির ব্যবস্থপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘সাত কলেজের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মুখে পড়ছি। শিক্ষকরা এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তার উপর সাত কলেজের এতো পরিমাণ শিক্ষার্থী তারা কিভাবে সামলাবেন? ২০১৮ থেকে আমরা অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলন করে আসলেও প্রশাসন আমাদের দাবি মানছে না। ডাকসুর পক্ষ থেকে আশ্বাস পেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আমরা মাঠে আসতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এ সময় ক্লাস বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দাবি না মানলে আমরা ক্লাসে ফিরবো না। বৃহস্পতিবার আমাদের কর্মসূচী আরো বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের দাবি মানার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম প্রদান করে; কিন্তু প্রশাসন তাদের দাবি আদায়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বুধবার থেকে তারা পুনরায় আন্দোল শুরু করেছন। এর আগেও ২০১৮ সালে সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তখন ছাত্রীদের যৌন হয়রানী এবং আন্দোলনের সমন্বয়কসহ অন্যান্যদের মারধরের মাধ্যমে সে আন্দোলনকে পণ্ড করে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংগঠন ছাত্রলীগ।