বিশ্বকাপ বাছাই : সহজ গ্রুপে বাংলাদেশ

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মোটেই ভালো ছিল না। জেতা হয়নি কোনো ম্যাচ। একটি মাত্র ড্র নিজ মাঠে। তাও ১০ জনের তাজিকিস্তানের বিপক্ষে। পাঁচ দলের মধ্যে গ্রুপের তলানিতে ছিল অবস্থান; যা তাদের এশিয়ান কাপের প্লে-অফে খেলতে বাধ্য করে। সেখানেও চার দফা ব্যর্থতা। যার শেষ পরিণতি ছিল ভুটানের কাছে হারের লজ্জা।

তবে সেই ধাক্কা সামলিয়ে আবার জেগে উঠেছে লাল-সবুজদের ফুটবল। প্লে-অফ কোয়ালিফায়ার্সে লাওসকে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা আবার বাছাই পর্বে। বুধভার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এএফসি ভবনে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বেরই ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক কাতার। যারা ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক। গ্রপের অন্য তিন দলের দু’টি লাল-সবুজদের পরিচিত প্রতিপক্ষ। একটি সাফ অঞ্চলের দেশ ভারত এবং অপরটি সাফের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৫ সালের পর সাফ থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেশ আফগানিস্তান। গ্রুপের পঞ্চম দেশ মধ্যপ্রাচ্যের ওমান। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে এই আট ম্যাচের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের বাছাই পর্ব।

এশিয়ার সেরা ৪০টি দেশ আট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে বাছাই পর্বে। প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা চার রানার্সআপ দল বিশ্বকাপের এএফসি জোনের চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হবে। এই ১২ দল ২০২৩ চীন এশিয়ান কাপের ফাইনাল রাউন্ডের টিকিট পাবে।

কাতার গ্রুপ সেরা হলে অন্য সাত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং পাঁচ বেস্ট রানার্সআপ দল বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। পরের সেরা ২৪ দল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে। সেখান থেকে ১২ দল চলে যাবে ২০২৩ সালে চীনে। বলতে গেলে এক অর্থে অপেক্ষাকৃত সহজ গ্রুপেই পড়েছে বাংলাদেশ। তাদের দুই প্রতিপক্ষের সাথে নিকটাতীতেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে।

এই গ্রুপে সেরা দল কাতার। তারা শুধু আগামী বিশ্বকাপেরই স্বাগতিক নয়। এবারের এশিয়ান কাপের শিরোপাজয়ী দল। সম্প্রতি তারা কোপা আমেরিকা খেলে এসেছে আমন্ত্রিত দল হিসেবে। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ৫৫। কাতারের সিনিয়র দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের কৃতিত্ব নেই। তবে তাদের অনূর্ধ্ব-২৩ ও অনূর্ধ্ব-১৬ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ মোকাবেলায় হারিয়েছে বাংলাদেশ। তা ২০১৭ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল ও ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে। সাধারণত বিশ্বকাপের স্বাগতিকদের বাছাই পর্বে খেলার কথা নয়। কিন্তু কাতারের খেলার কারণ এই বাছাই পর্ব একই সাথে এশিয়ান কাপেরও বাছাই পর্ব।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ওমানের অবস্থান ৮৬। ভারত আছে ১০১ এ। আর আফগানিস্তান ১৪৯ এ অবস্থান করছে। ভারতের সিনিয়র টিমের সাথে বাংলাদেশের সর্বশেষ দেখা ২০১৩ সালে। ভারতের মাঠে ফিফা প্রীতিম্যাচে বাংলাদেশ ২-২ গোলে ড্র করেছিল। সেবারের সাফেও তাদের সাথে ১-১ গোলে ড্র করা। আর আফগানদের কাছে ২০১৫ সালের সাফে ০-৪ গোলে হার মামুনুলদের। অবশ্য তা গোল মিস আর ভুলের খেসারতে। ভারত যত ভালো ফুটবলই খেলুক না কেন বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের ঘাম ঝরিয়েই জিততে হয়। আর আফগানদের ভরসা প্রবাসী ফুটবলার।

এখন জেমি ডের অধীনে যেভাবে চলছে বাংলাদেশ জাতীয় দল, সর্বশেষ এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে তাদের যে পারফরম্যান্স বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে সে ধারা অব্যাহত থাকলে এবারের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভালো করার কথা জামাল ভূঁইয়াদের। ২০১১ সালে লেবাননকে হারানো প্রেরণা যোগ হলে আরো এগিয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

লাল-সবুজরা যদি গ্রুপে তৃতীয় বা সেরা চতুর্থদের তালিকায় থাকতে পারে তাহলে এশিয়ান কাপের দ্বিতীয় দফা বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।

গ্রুপকে সহজ বললেন জামাল ভূঁইয়া
এটা নিশ্চিত এবারও বাছাইপর্বে গ্রুপেই শেষ হবে বাংলাদেশের কাতার বিশ্বকাপ মিশন। তবে গ্রুপে তাদের যে প্রতিপক্ষ তাদের এবার ভালো কিছুর আশা করা যেতেই পারে। সে আশাবাদীদের কাতারে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি তো এক কদম এগিয়েই বললেন এবার আমাদের গ্রুপে দুই বা তিন নাম্বার হওয়ার সুযোগ আছে। গ্রুপিংটা বেশ সহজই বলতে হবে।

ডেনমার্ক প্রবাসী এবং বর্তমানে সাইফ স্পোর্টিংয়ে খেলা এই মিডফিল্ডারের বাছাইপর্ব নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারন, বিগত মাস গুলোতে একত্রে থাকা জাতীয় দলের ফুটবলারদের। জামাল জানান, আমরা গত নয় মাস ধরে একত্রে আছি। আমাদের টিম কম্বিনেশন ভালো। বোঝাপড়াও চমৎকার।

কাতার বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাই পর্বে গ্রুপিং :
‘এ’ গ্রুপ : চীন, সিরিয়া, ফিলিপাইন, গুয়াম, মালদ্বীপ
‘বি’ গ্রুপ : অস্ট্রেলিয়া, জর্ডান, চাইনিজ তাইপে, কুয়েত, নেপাল
‘সি’ গ্রুপ : ইরান, ইরাক, বাহরাইন, হংকং, কম্বোডিয়া
‘ডি’ গ্রুপ : সৌদি আরব, উজবেকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিঙ্গাপুর
‘ই’ গ্রুপ : কাতার, ওমান, ভারত, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ
‘এফ’ গ্রুপ : জাপান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া
‘জি’ গ্রুপ : সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া
‘এইচ’ গ্রুপ : দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, উত্তর কোরিয়া. তুর্কমেনিস্তান, শ্রীলঙ্কা।

Share this post

scroll to top