অবিলম্বে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি। একইসাথে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের বিত্তবান মানুষদেরকে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষদের পাশে যার যার সামর্থ অনুযায়ী দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানায় দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক এক অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি ‘গণতন্ত্রের মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন ও চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কুৎসিত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী। নিজের পথকে কন্টকমুক্ত করতেই সরকারপ্রধান তাকে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছেন। গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া যেন অভিন্ন সত্তা। দেশের মানুষ আজ সকল অধিকারহারা হয়ে এক ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে প্রতিনিয়ত দেশনেত্রীর মুক্তির প্রহর গুনছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, সরকারপ্রধান বিচার-আচার-পুলিশ-প্রশাসনসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিরোধী দল-মত-পথে বিশ্বাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। সেজন্য পাশবিক নারী-শিশু নির্যাতন, কুপিয়ে হত্যা, আগুনে পুড়িয়ে লোমহর্ষক হত্যা, নারী নির্যাতনের পর পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়াসহ দেশ অনাচার-অবিচারে ভরে উঠেছে। এমনকি একজন প্রধান বিচারপতি তার স্বাধীন বিচারকর্মের কারণে তাকে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে নতুন করে যে মামলা দেয়া হয়েছে তা গোটা বিচার বিভাগের জন্য সরকারের সতর্ক সঙ্কেত।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান ও সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বললেই সেটিকে দেশদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার কারণেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। সরকারের কুকীর্তি-অপকীর্তি এবং অনাচারে প্রতিবাদ করার জন্যই তিনি কারাগারে।
তিনি বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক-শিক্ষক-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-সাংবাদিক সকলেই আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সোচ্চার। দেশের সকল জনগোষ্ঠী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। জনগণ মনে করে বেগম জিয়া কারামুক্ত হলেই অন্ধকারের কালো রাতের অবসান হবে। মানুষ প্রাণখুলে কথা বলতে পারবে। গুম, ক্রসফায়ারের ভয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের ভয় থেকে মুক্ত হতে পারবে।
রিজভী দাবি করেন, শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে মুক্তি দিতে হবে।
বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার মানুষ দেখেনি, মানুষ দেখছে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে শহর তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। এক মাসে চট্টগ্রাম নগরী ডুবেছে পাঁচ বার, আর রাজধানী ঢাকার মানুষ বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। উজানের পানি ও প্রবল বর্ষণে সারাদেশ এখন পানিতে ভাসছে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, জামলপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা এখন পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, বন্যা বিস্তৃত হয়ে দেশের মধ্যভাগসহ প্রায় সকল জেলা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। একদিকে বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে, গবাদি পশু ও ক্ষেতের ফসল ভেসে গেছে। অন্যদিকে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটে হাহাকার করছে। ত্রাণের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না বন্যাকবলিত মানুষ। গত দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী তাদের দলীয় সভায় বন্যাদুর্গতদের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও এখনো পর্যন্ত্র ত্রাণ তৎপরতার কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি।
‘মিথ্যা চিৎকারসর্বস্ব দল আওয়ামী লীগ। অসংযমী ভাষণ, উদ্ভট মন্তব্য, অনাবশ্যক কটুকথা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি। সুতরাং দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ, দুর্বিপাক ও দুর্নীতি ছাড়া জনস্বার্থে ভালো কিছু করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী নেতারা শুনে কম, কিন্তু বলে বেশি। তারা দেশব্যাপী মহাপ্লাবনের বিপর্যয় নিয়ে ছলচাতুরী করছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।