কার আক্ষেপ ঘুচাবে এ বিশ্বকাপ? ইংল্যান্ড না নিউজিল্যান্ডের। তবে এটা ঠিক, এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে আইসিসি। কাল লর্ডসের ফাইনালে যে জয় পাবে, সে দল নতুন প্রথমবারের মতো শিরোপা অর্জন করার গৌরব অর্জন করবে। অথচ দু’টি দলেরই বিশ্বকাপ পাওয়া নিয়ে রয়েছে আক্ষেপ। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের।
১৯৭৫ সাল থেকে শুরু বিশ্বকাপের। ওই বছরসহ টানা তিন আসর ইংল্যান্ডেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ তিনবারের একবার ’৭৯-এর ফাইনাল খেলেও বিশ্বকাপ পায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যেতে হয়েছে। এরপর আরো দু’বার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল ইংলিশরা। ১৯৮৭ ও ১৯৯২। ’৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে স্বপ্নভঙ্গের পর ’৯২তে স্বপ্নভঙ্গ হয় পাকিস্তানের কাছে।
অথচ প্রতিটা আসরেই হট ফেবারিট থাকে ইংল্যান্ড। বিশেষ করে ক্রিকেটের সূচনা যে স্থানটি থেকে সেখানেই তো ক্রিকেট চর্চা বেশি থাকার কথা। এখনো ইংল্যান্ডেই ক্রিকেট চর্চা বেশিই হচ্ছে। কাউন্টি ক্রিকেট সমমানের এখনো করতে পারেনি কোনো দেশ। যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী, ক্রিকেট স্ট্রাকচারও সবার চেয়ে এগিয়ে।
তাইতো ইংল্যান্ড সব আসরেই থাকে এগিয়ে। এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু শিরোপা অধরাই রয়ে গেছে সে সূচনা থেকেই। অথচ একই সাথে যারা ক্রিকেট শুরু করেছিল বা যারা তার পরেও শুরু করেছে তাদের মধ্যেও অনেকে শিরোপা তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে। ইংল্যান্ড ব্যর্থ প্রতিবারই। একই অবস্থা তাদের ফুটবলেও। ইংরেজদের কাছে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলের গুরুত্ব বেশি হলেও সেখানেও তারা ব্যর্থ শিরোপা নিতে। ক্রিকেটেও আক্ষেপ।
এবার সে আক্ষেপ ঘুচানোর পালা। এওন মরগানের হাত ধরে এবার শিরোপা জেতার মিশন তাদের। অবশ্য যেভাবে এ আসরে খেলছেন তারা ইতঃপূর্বে এতটা নিখুঁত ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়নি। দলটি সব দিক থেকেই ব্যালান্সড এবং যোগ্যতর দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে। শিরোপার লড়াইয়ে অন্তত ৭৫ শতাংশ এগিয়ে তারা প্রতিপক্ষের তুলনায়।
যেমনটা খেলছে দলের ব্যাটিং লাইন তেমন বোলিং। নিজেদের মাঠে, নিজেদের কন্ডিশনে এতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ক্রিকেট খেলতে আর দেখা যায়নি তাদের। ফলে এবার শিরোপা তুলে নেয়ার জন্য দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ দলটি। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সংমিশ্রণে গড়া দলটির পক্ষে সম্ভবও। তা ছাড়া এটা তাদের বড় একটা সুযোগও। নিজের মাঠে এবার যদি সেটা পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে খেসারত তাদের কত দিন পর্যন্ত গুনতে হবে, সেটা তারাও একেবারে কম জানেন না!
নিউজিল্যান্ডও সেই সূচনা বিশ্বকাপ থেকেই খেলে আসছে। প্রতিবারই ভালো ক্রিকেট খেলছে তারা। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়। এটা তাদের দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলা। ২০১৫ সালেও তাদের বিশাল সুযোগ ছিল। কেননা গ্রুপ পর্যায়ে ওই আসরে নিউজিল্যান্ড যে ক্রিকেট খেলেছিল, সেটা এক কথায় চমৎকার। ছন্দপতন ঘটেনি কোনো ম্যাচেই।
গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়াকেও নাজেহাল করে ছেড়েছিল তারা। কিন্তু মেলবোর্নের ফাইনালে একেবারে অসহায় আত্মসমর্পণ করে কাঁদিয়েছিল তারা কিউইদের। প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ইনিংসে ছিল একটি হাফ সেঞ্চুরি; যা করেছিলেন এলিয়ট (৮৫)। এরপর রস টেইলরের ৪০ রান ছিল উল্লেখযোগ্য। ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ছিলেন অধিনায়ক। তিনি ব্যর্থ ছিলেন টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা স্কোরার থাকা সত্ত্বেও।
এখনকার অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও সুবিধা করতে পারেননি সে ম্যাচে। অলআউট হয়েছিলেন তারা ৪৫ ওভারেই। ইনিংস শেষে মেলবোর্নের গ্যালারি অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের দর্শকরা বের হয়ে যান। কারণ অসিরা যে ছেড়ে দেবে না সেটা তারা জানত। বাস্তবেও ছিল তাই। অস্ট্রেলিয়া লক্ষ্যে পৌঁছায় হেসে খেলে। কল্পনাও করতে পারেনি মাইকেল ক্লার্ক এতটা সহজেই বিশ্বকাপ হাতে নিতে পারবেন। ম্যাচ শেষে বলেও ছিলেন তিনি এ কথা।
এবারো তারা খেলছে ফাইনাল। ফলে দু’দলের সাপোর্টারদের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। হারতে চাইবে না কেউই। কিন্তু এক দলকে তো হারতেই হবে। যদি কন্টিনিউ বৃষ্টি না থাকে দুই দিন। বৃষ্টির জন্য যদি খেলা একেবারেই (২০ ওভার হলেও) না হতে পারে, তাহলে হয়তো যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা দেবে আইসিসি। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তো এক দলকে হারতেই হচ্ছে। কে হারবে তাহলে? এ জল্পনা চলছে। আর শেষ হাসিটা কার সেটাও ইংলিশ না কিউই!