ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ লুটপাটের অভিযোগ

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঝালকাঠিতে বিষখালী নদী তীরের মানুষের জন্য বরাদ্দ হওয়া ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চৌকিদারের বিরুদ্ধে।

সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ না করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন নিজেই তা বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এ খবর জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি ধরা পড়লে ইউপি সদস্য তার বাড়ি থেকে আজ শুক্রবার সকালে ত্রাণের কিছু মালামাল এনে স্থানীয় সাইক্লোন সেল্টারের কক্ষে আটকে রেখেছেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেন, ঘূণিঝড় ফণী আঘাত হানার খবর শুনে বিষখালী নদী তীরের চর ভাটারাকান্দা এলাকার তিন শতাধিক মানুষ গত ৪ মে সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়। ক্ষতিগ্রস্তদের রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়। পরের দিন তাদের জন্য চাল, ডাল, চিনি, তেল, মুড়ি, বিস্কুটসহ কয়েক ধরণের খাবার সামগ্রী প্যাকেট করে বিতরণের জন্য ওই এলাকায় পাঠানো হয়। সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলতাফ হোসেনকে ৩০ প্যাকেট বিতরণের জন্য দেয়া হয়। কিন্তু আলতাফ হোসেন স্থানীয় চৌকিদার তোফাজ্জেল হোসেনের সহযোগিতায় এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ না করে নিজের বাড়িতে নিয়ে রাখেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন তার বাড়ি ঘেরাও করে ত্রাণ সামগ্রী উদ্ধার করে। বিষয়টি ধরা পড়ায় আলতাফ হোসেন আজ শুক্রবার সকালে তার বাড়ি থেকে কিছু মালামাল এনে সাইক্লোন সেল্টারের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

ভাটারাকান্দা গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, আমরা তিন শ’ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণের কথা বলা হয়। ত্রাণও আসে কিন্তু তা ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন আত্মসাৎ করেছে। ধরা পড়লে সে ত্রাণের বস্তা খুলে চিনি, ডালসহ কয়েক পদের মালামাল বাড়িতে রেখে, কিছু মালামাল নিয়ে সাইক্লোন সেল্টারের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় মিস্ত্রি বলেন, আমাদের ত্রাণ ইউপি সদস্য আত্মসাৎ করেছেন। ত্রাণের প্যাকেট খুলে মালামাল রেখে দিয়েছেন। আমাদের পুরো প্যাকেট দিতে হবে, নইলে কেউ ত্রাণ নিবো না।

সাইক্লোন সেল্টার সংলগ্ন বাসিন্দা ফাহিমা বেগম বলেন, প্যাকেট থেকে চিনি, ডাল ও তেল নিয়ে গেছেন মেম্বার। আমরা তার বিচার চাই। গরিবের মাল আত্মসাৎ কেমনে করে, তার বিচার হওয়া দরকার।

স্থানীয় মো: সোহাগ বলেন, রাতে এক দফায় ত্রাণের মালামালগুলো বাড়িতে নিয়ে যায় মেম্বার। পরের দিন সকালে বাকি মাল নিতে এলে আমরা হাতেনাতে তাকে আটক করি। পরে তার বাড়ি থেকে ত্রাণের কিছু মাল নিয়ে আসেন মেম্বার। তবে প্যাকেটগুলো খোলা ছিল। প্যাকের মধ্য থেকে চাল, চিনি, ডাল ও তেল রেখে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে ধানসিঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন।

ধানসিঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। যে ত্রাণ পাওয়া গেছে, সেগুলো আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, মালামালগুলো নিরাপদে রাখার জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কিছু লোকের মাঝে এগুলো বিতরণ করা হয়। বাকিগুলো চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিতরণ করা হবে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতাহার মিয়া বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ত্রাণের মালামালগুলো সঠিকভাবে বন্টনের নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা করে ইউপি চেয়ারম্যান সেগুলো বিতরণ করে দিচ্ছেন। ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top