শিশু কন্যা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা : পাতানো মামার বিরুদ্ধে মামলা

রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া ইউনিয়নের ছোট রুপাই নীলেরপাড় গ্রামে ১৪ বছরের এক শিশুকন্যা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের মা পাতানো ভাই লেবু মিয়ার (৩৮) বিরুদ্ধে থানা মামলা না নেয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ মামলা করেছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মর্নেয়া ইউনিয়নের ছোট রুপাই নীলের পাড়ের বুলবুল ইসলাম স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাথার খাস জমিতে টিনের চালা তুলে বসবাস করে আসছিলেন। পাশ্ববর্তী চৌদ্দমাথা পাইকাটারী গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র লেবু মিয়া (৩৮)। তার পেশা জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতার কার্ড বা কাজ দেয়ার দালালি করে এলাকার দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা।

অনটনের সংসারের প্রয়োজন মেটাতে এরই মধ্যে বুলবুলের স্ত্রী সুফিয়া বেগম সরকারী সুবিধার কার্ড বা কাজের জন্য লেবুর কাছে যান। লেবু তাকে কার্ড করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুফিয়াকে ধর্ম বোন বানান। সুফিয়ার ৩ কন্যা ও ১ পুত্র লেবু মিয়াকে মামা হিসেবে শ্রদ্ধা করতে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লেবু সুফিয়াদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য যাতায়াত শুরু করেন। এরই মধ্যে সুফিয়া ও বুলবুলের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রলোভনে লেবু মিয়া সুফিয়ার ১৪ বছরের শিশু কন্যার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে হঠাৎ করেই লেবু যাতায়াত বন্ধ করে দেন। সুফিয়া মেয়ের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এখন সে ১৭ সপ্তাহের গর্ভবতী।

এ ঘটনায় হতবিহবল দিনমজুর বুলবুল ও সুফিয়া এলাকাবাসীকে বিষয়টি জানান। এলাকাবাসী গত ২৮ এপ্রিল লেবুকে সুফিয়ার বাড়িতে ডেকে আনেন এবং মেয়েটিকে বিয়ে করার কথা বলেন। কিন্তু লেবু মিয়া সালিশ না মেনে গর্ভের সন্তান নষ্টের খরচ দেয়ার কথা বলে চলে যান।

এলাকাবাসী হারুন, আশরাফুল, রশিদ, সাজু, মাহমুদ জানান, লেবু প্রভাবশালী হওয়ায় এতবড় একটি ঘটনার পরও তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটিয়ে আগেও অর্থ ও প্রভাব দেখিয়ে পার পেয়েছে। এ ঘটনাটিও তিনি টাকা এবং প্রভাব খাটিয়ে পার পেতে চাইছেন। এজন্য আমরা সবাই চাঁদা দিয়ে সুফিয়াকে মামলা করার জন্য টাকা দিয়েছি।

এলাকাবাসী সাজু মিয়া জানান, ভুক্তভোগির মা সুফিয়া বেগম থানায় বিষয়টি নিয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। সে কারণে সুফিয়া গত ৮ মে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাদন দমন আদালত-২-এ মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন অব বাংলাদেশ-পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

ভুক্তভোগীর মা সুফিয়া বেগম জানান, আমার দরিদ্রতার সুযোগে ভাতা কার্ড করে দেয়ার নামে লেবু আমাকে বোন বানান। আমরা তার চালাকি বুঝতে পারি না। সে আমার মেয়েকে এভাবে ধর্ষন করলো। মেয়েটি এখন চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি থানায় গেছি। থানা আমার মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করেছি। আমার মেয়ের গর্ভের সন্তানের স্বীকৃতি চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লেবু মিয়া জানান, আমি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার লোকজনের ষড়যন্ত্রের স্বীকার।

মর্নেয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী আজাদ জানান, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ঘটনাটি শুনেছি। আদালতে মামলা হয়েছে। আমি চাই এটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হোক।

গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান জানান, এ ধরনের কোনো ভুক্তভোগী আমার থানায় আসেনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top