ভূমিদস্যু লুটেরারা নদী খাল মাঠ দখল করেই যাচ্ছে : আবুল মকসুদ

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোললের (বাপা) সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, এখন দেশে ভূমিদস্যু ও লুটেরারা তাদের স্বার্থে নদী, খাল, মাঠ দখল করেই যাচ্ছে।

বাপা, গ্রীণভয়েস, ডাব্লিউবিবিট্রাস্ট, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ-স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইয়ুথ ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে এক নাগরিক সমাবেশ তিনি একথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে ও মিরপুর রোড-গ্রিণ রোড সংযোগস্থলে নির্মিত সুদৃশ্য ‘অর্ঘ্য’-এর সামনে “বন্ধ কর অনবদ্য ‘অর্ঘ্য সড়কদ্বীপ’ বিধ্বংসী কার্যক্রম! রক্ষা কর এই সুন্দর সবুজ নান্দনিক স্থাপনা ও পরিবেশ!” দাবিতে এ নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, এখানে সবুজে ঘেরা পার্কটি কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে। এটা একদিনেই হয়নি। এর পেছনে অনেক শ্রম দেয়া হয়েছে। সেই শ্রম ও কষ্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুষ্টুবুদ্ধির লোকেরা তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে দেশের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা দেশের জনগণের সাথে তামাশার সামিল। আর এই সুদৃশ্য সবুজে ঘেরা পার্কটি হাসপাতাল বানানোর নামে অত্যন্ত সু-কৌশলে গ্রাস করার পাঁয়তারা করছে। তারা যদি এ অবস্থা থেকে পিছিয়ে না যায় তা হলে অনসনসহ কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন তিনি।

বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক, স্থপতি ইকবাল হাবীবের সভাপতিত্বে এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রীন ভয়েসের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিল্পানুরাগী, নাট্যকার, অভিনেতা মামুনুর রশিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, প্রকৃতি ও নগর সৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদীন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক, মিহির বিশ^াস, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ইবনুল সাঈদ রানা, গ্রীন ভয়েসের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সমন্বয়ক, নাজনীন তিতলী প্রমুখ।

এছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীগণ ও স্থানীয় অধিবাসীরা।

স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, যেই মুহূর্তে বাংলাদেশের সকল দখলদারদের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় বসে তারা ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস লীলায় মত্ত।

তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের উদ্দেশে বলেন, আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেই প্রতিশ্রিুতি পালন করেন। আপনি যানজট নিরসনের সভাপতি হিসেবে আপনার জানা উচিত কোনো সৌন্দর্য মন্ডিত স্থাপনার ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো ভবন নির্মাণ করা আইনের পরিপন্থী।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অসাদু কর্মকর্তাদের মদদেই এই কর্মকান্ড চলছে। আমরা দেখতে চাই আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এবং প্রমাণ করবেন আপিন জনগণের প্রকৃত নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং আপনার কাজ শুধুই জনকল্যাণমূলক। এর সমাধান ছাড়া আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসবো না। প্রয়োজনে আরো কঠোর আন্দোলনের যাব।

মামুনুর রশিদ বলেন, কারা যেন গোটা ঢাকা শহরকে একটা দোকান বানানোর চেষ্টায় সদা লিপ্ত।

রাফেয়া আবেদীন বলেন, কিছু লোকের অতি লোভের গ্রাসে পতিত হয়ে ঢাকা শহরের অধিকাংশ ফাঁকা স্থান আজ দখল হয়ে গেছে। মানুষের নিঃশ^াস নেয়ার জায়গাটাও আজ আর অক্ষত নেই।

গোলাম কুদ্দুস বলেন, বর্তমানে ঢাকা মেঘা সিটিকে একটা গুদাম ঘরে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। তাদের বাণিজ্যিক মনোভাবের ফলশ্রুতিই এই জঘন্য কর্মকান্ড। আমরা কোনভাবেই এটা সফল হতে দেব না।

সমাবেশ থেকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত অর্ঘ্য সড়কদ্বীপ লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সড়কদ্বীপ বিনষ্ট বা ধ্বংসকরে ভিন্ন কোন স্থাপনা বসানোর পরিকল্পনা বন্ধের দাবি জানান হয়। এর পাশাপাশি হাসপাতাল, বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিজ্ঞান গবেষণাগার সংলগ্ন, অধিক ট্র্যাফিক ও জনবহুল এই মনোরম স্থানটি থেকে বিদ্যমান তেল-গ্যাস পাম্প, ভবন নির্মাণ জাতীয় জননিরাপত্তায় ঝূঁকিপূর্ণ সকল স্থাপনা অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান তারা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top